চৌধুরী ভাস্কর হোম, মৌলভীবাজার:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহুর্তে নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে সরে দাঁড়িয়েছেন মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আহমদ রিয়াজ উদ্দিন। শনিবার (৬ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটার দিকে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে লাইভে এসে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
লাইভে আহমদ রিয়াজ বলেন, ‘আগামীকালকে যে সংসদ নির্বাচন সে নির্বাচনে আমি একজন প্রার্থী ছিলাম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী। আমার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন সাহেব সরকার দলের এমপি। প্রশাসনের উপর আমার কোন ধরণের অভিযোগ নেই। বড়লেখা এবং জুড়ী দুইটা উপজেলার প্রশাসন, পুলিশ কর্মকর্তা, ওসি সবসময় আমার সাথে ভালো যোগাযোগ রেখেছেন আমাকে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু একজন মন্ত্রীর সাথে নির্বাচন করতে গিয়ে যেটা বুঝতে পারলাম এই নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু হবে না।
কারন একজন রানিং মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যাওয়ার মতো রিটার্নিং অফিসার বা থানা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ বলেন, ওসি বলেন কেউ উনার বিরুদ্ধে যাবে না। উনি রানিং মন্ত্রী। আমার নির্বাচনী জসভায় যারা আমাকে সমর্থন দিয়েছিলেন তারা মূলত এন্ট্রি আওয়ামী লীগ। আমাকে ভালোবেসে, আমাকে ভোট দিতে ভোটাররা নির্বাচনী কেন্দ্রে চলে আসবে এবং মন্ত্রী দেখাবেন ৭০ পার্সেন্ট ভোটারদের উপস্থিতি। আমি জানি শুধু লাঙ্গকে নয়, আমাকে ভালোবেসে পরিবর্তনের আশায়, রাজতন্ত্র ভাঙ্গার আশায়, মামু-ভাগ্নার বড়লেখা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যারা ভোটকেন্দ্রে আসবে তাদের ভোট রক্ষা করার প্রতিশ্রতি দিয়েছিলাম আমি আগেই। কিন্তু আজকে আমার মনে হচ্ছে যে, আমি তাদের ভোট রক্ষা করতে পারবো না। কারন আমি তাদের ভোট রক্ষা করতে গেলে আমাকে যারা সমর্থন করবে, আমাকে যারা ভোট দিবে, আমার যারা এজেন্ট হবে তারা নিরাপত্তা থাকতে পারবে না, কোন দিনও নিরাপত্তায় থাকতে পারবে না। তাই আমি চাই না যে, আমাকে যারা সমর্থন করে, আমাকে যারা ভালোবাসে, আমাকে যারা ভোট দিবে তারা হয়রানীর শিকার হওক, মামলা মোকদ্দমার শিকার হওক তা আমি কখনোই চাই না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই নির্বাচন থেকে আজকে আমি সড়ে গেলাম। আগামীকাল ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য আপনারা কেউ আসবেন না। আপনারা যারা নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন তারা আসবেন। আপনারা জানেন দুইদিন আগে তৃণমূল বিএনপির যে প্রার্থী সে আমাকে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সরে গেছে। এখন আবার সে ভিডিও নিয়ে নির্বাচনে এসেছে। মানুষ এত বোকা না, মানুষ বোঝে। প্রতিদ্ব›দ্বীতা আমার সাথে হওয়ার কথা ছিল। ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি আমি তার সাথে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করেছিলাম। বিএনপি-জামাত নির্বাচনে ছিল না। সে নির্বাচনে উনি (মো. শাহাব উদ্দিন) জয়লাভ করে হুইপ হয়েছিলেন। এখনো যদি আমি নির্বাচনে থাকি তাহলে উনি ম্যাকানিজম করে এমপি হবেন, মন্ত্রী হবেন। আমার ভোটের রেজাল্ট পাল্টানো হবে। সেই দায়ভারটা আমার উপর পড়বে। কারন আন্দোলনরত যারা রয়েছেন তারা সারাজীবন আমাকে গালি দিবে। তাই আমি এমপি হওয়ার চেয়ে আমি মনে করি মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে আসুক। আমি যখন মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষা করতে পারবো না, দেশে-বিদেশে যারা আমাকে সমর্থন করেছেন ভোটের দিন দুপুরে কান্নাকাটির চেয়ে ভোটের আগের দিন ভোট থেকে সরে যাওয়া সবচেয়ে ভালো। আমার বড়লেখা এবং জুড়ী উপজেলার আমার সুজানগর ইউনিয়ন, আমার দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন, আমার বর্ণি ইউনিয়ন, আমার দাসেরবাজার ইউনিয়ন, আমার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন, আমার বোবারতল, আমার কোটাওরা, আমার তালিমপুর, আমার হাকালুকি, আমার দক্ষিণভাগ, আমার কাছুরিঘাট, আমার কাসেমনগর, আমার গোয়ালবাড়ি, আমার লাঠিটিলা, আমার শাহপুর, জায়ফরনগর, বেলাগাঁও, ফুলতলা, কলাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় আমি গেছি, মিটিং করছি। আপনারা আমার বক্তব্য শুনছেন, আমারে সমর্থন করছইন, প্রতিশ্রুতি দিছইন আমার দায় আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাইবা। আমি কিন্তুক আপনারারে কইছলাম আমি যদি আপনারার ভোট রক্ষা করতাম পারি, এই ধরণের আশা পাই তাহলে আমি নির্বাচনে থাকমু আপনারা ভোট দেইন যেন। আমি আজকে এই নির্বাচন বয়কট করলাম। এখন সিদ্ধান্ত আপনারার। আমি বয়কট করছি কিন্তু ব্যালট পেপারে লাঙ্গলের মার্কা থাকবো কিন্তু আমারে ভোট দিবার লাইগা কেন্দ্রে কেউ আইতা না। সবার জন্য শুভ কামনা। দেখা হকে বিজয়ের কোন পথে যদি মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে যায়। আমি আহমদ রিয়াজ মৌলভীবাাজর-১ আসনের নির্বাচন বয়কট করলাম, সিদ্ধান্তটা আমার, সিদ্ধান্তটা আমার বিবেকের। কারন বিবেক মানুষের সবচেয়ে বড়। আমি আপনাদের কষ্ট দিয়েছি, আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি চাই গণতন্ত্র ফিরে আসুক। আল্লাহ হাফেজ।’
নিজের ভেরিফাইড পেইজে লাইভের বিষয়ে আহমদ রিয়াজ উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করলে তিনি তা রিসিভ করেননি।