অনলাইন ডেস্ক:
ভর দুপুর, হাইস্কুলের মাঠে দীর্ঘ অপেক্ষায় পরিবারসহ এলাকাবাসী। সিঙ্গাপুর প্রবাসী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম শহিদ ও তার সিঙ্গাপুরিয়ান বধূ মাইশা শহিদকে বরণ করে নিতেই তাদের এই অপেক্ষা। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে উৎসুক জনতার ভিড়। কিছুক্ষণ পর মধ্য আকাশে হেলিকপ্টারের দেখা। অবশেষে অপেক্ষার অবসান। মেঘনা এ্যাভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টারে চড়ে অবতরণ করলেন এই দম্পতি। ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানালেন সবাই। সবার মনে যেন এক অন্যরকম ভালোলাগা।
মঙ্গলবার (৭ মে) দুপুরে এমন এক ভিন্ন আয়োজনের দেখা মিলল পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় মাড়েয়া ইউনিয়নের মাড়েয়া মডেল হাই স্কুল মাঠে।
এসময় কথা হয় একই এলাকার আলেমা বেগম ও শম্পা রানীর সঙ্গে। তারা সময় সংবাদকে বলেন, হেলিকপ্টারের অনেক ছবি দেখেছি। কিন্তু কখনো সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয় নি। আজ আমাদের এলাকার ছেলে এই সুযোগ করে দিয়েছে। তাই আমরা পরিবারের সদস্যরা মিলে হেলিকপ্টার ও নববধূকে দেখতে এসেছি।
ষাটোর্ধ্ব আলেয়া বেগম সময় সংবাদকে বলেন, কয়েকদিন ধরে শুনছি আমাদের এলাকায় বিদেশি বউ হেলিকপ্টারে আসবে। তাই আমরা সকাল থেকে তাদের দেখতে স্কুল মাঠে অপেক্ষা করছি।
এদিকে আমিরুল হক ও নুরুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, আজ আমাদের অনেক ভালো লাগছে। কারণ আমাদের এলাকার ছেলে শহিদ বিদেশ থেকে হেলিকপ্টারে ফিরেছে। সঙ্গে বিদেশি বৌ নিয়ে এসেছে। তাদের দেখে আমরা সবাই খুবই আনন্দিত।
এদিকে পরিবারের সদস্যরা বলছে, দীর্ঘসময় পর নিজ দেশে ফেরার আনন্দ ও স্বপ্ন পূরণে নববধূকে নিয়ে নিজ জন্ম ভূমিতে ফিরেছে এই প্রকৌশলী।
শহিদের বড় ভাই রবিউল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, আমার ছোট ভাই সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন ধরে থাকছে। সে সেখানে বিয়ে করে নতুন বউকে নিয়ে এবার প্রথম নিজ দেশে এসেছে। তার ইচ্ছা ছিল নববধূকে হেলিকপ্টারে নিয়ে আসবে। তাই তাদের আসার পর আমরা তাদের বরণ করে নিয়েছি।
নিজ এলাকায় ফেরার পর পরিবারের পাশাপাশি স্থানীয়দের এমন ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছেন তারা। জানান নিজের অনুভূতির কথা।
প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম শহিদ সময় সংবাদকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে সিঙ্গাপুরে থাকছি। আমার স্বপ্ন ছিল হেলিকপ্টার করে আমার স্ত্রী ও ডাইরেক্টরকে নিয়ে বাংলাদেশে আসা। সেই স্বপ্ন থেকে আজ নিজ জন্মভূমিতে ফিরেছি। খুব ভালো লাগছে, আমাদের বরণ করে নিতে পরিবারের পাশাপাশি এলাকার মানুষ এসেছে। তবে আরও ভালো লাগছে, যে স্কুল থেকে পড়াশোনা করে আজ আমি দেশের বাইরে সেই স্কুলের মাঠেই আমাদের হেলিকপ্টার অবতরণ হয়েছে।
এদিকে এমন ভালোবাসা পেয়ে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরিয়ান ওই নববধূ।
পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আলোক পাড়া গ্রামের বাসিন্দা শহর আলী ও রহিমা বেগমের ছেলে ৫ম ছেলে শহিদুল ইসলাম। ২০০৭ সালে সিঙ্গাপুরে গিয়ে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইন্সিটিউট থেকে পড়াশুনা করেন। এরপর প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করলেও বর্তমানে নিজের কনস্ট্রাকশন কোম্পানি পরিচালনা করে আসছেন। এর মাঝে ২০২৩ সালের নভেম্বরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে সিঙ্গাপুরের এই তরুণীকে বিয়ে করে জীবন সঙ্গী করেন তিনি।