হোম অন্যান্যসারাদেশ জানা গেল সিরাজগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের কারণ

জানা গেল সিরাজগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের কারণ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 50 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে চাঞ্চল্যকর বাবা-মা ও মেয়েকে গলাকেটে হত্যার রহস্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে উদঘাটন করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত একমাত্র আসামি রাজীব কুমার ভৌমিককেও (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র একটি হাসুয়া ও লোহার রড উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার রাজীব কুমার ভৌমিক উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথের ছেলে।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মন্ডল।

পুলিশ সুপার বলেন, ভাগিনা রাজীব কুমার ভৌমিকের কাছে ৩৫ লাখ টাকা পাওনা ছিলেন মামা বিকাশ সরকার। ওই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন তিনি। এমনকি নিজের বোন অর্থাৎ রাজীবের মা প্রমীলা রানীকেও ফোনে বকাবকি করছিলেন বিকাশ।

ঋণের টাকা দিতে না পারায় অতিরিক্ত তাগাদায় অতিষ্ঠ হয়ে মামাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রাজীব। কিন্তু পরিস্থিতিতে পড়ে মামী ও মামাতো বোনকেও হত্যা করেন তিনি, যোগ করেন পুলিশ সুপার।

গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে তাড়াশের গোপালজিউ মন্দিরের পাশের একটি ফ্ল্যাট থেকে বিকাশ সরকার (৪৫), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৩৫) ও মেয়ে পারমিতা সরকার তুষির (১৫) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকারের ভাই সুকমল সাহা বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, ঘটনার পরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তের শুরুতে আমরা এঙ্গেলগুলো কী হতে পারে তা স্থির করি। ভিকটিম বিকাশ ও তার ভাগিনার মধ্যে মোবাইলে কথোপকথনের একটি অডিও পাই। সেখান থেকেই আমরা ক্লু পাই। পরে আমরা নিশ্চিত হতে পারি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভাগিনা রাজীব জড়িত। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ঘটনার দায় স্বীকার করেন রাজিব। সে জানায়, শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পরপরই একে একে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।

রাজীবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ সুপার আরও বলেন, তার বাবার ‍মৃত্যুর পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশের সঙ্গে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হন। বিকাশ ভাগিনা রাজীবকে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন। ব্যবসা চালু অবস্থায় রাজীব তার মামাকে ধাপে ধাপে লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন। কিন্তু বিকাশ রাজীবের কাছ থেকে আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন। গত ২২ জানুয়ারি ওই টাকা ৭ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার জন্য রাজীবকে চাপ দেন এবং তার বোন অর্থাৎ রাজীবের মা প্রমীলা রানীকেও ফোনে বকাবকি করেন। রাজীব টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মামার বকাবকিতে কষ্ট পাওয়ায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন ২৭ জানুয়ারি সাড়ে তিন কেজি ওজনের একটি লোহার রড ও একটি হাসুয়া সংগ্রহ করেন। বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে মামাকে ফোন করে পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বাসায় আসতে চান। বিকাশ সরকার তাড়াশের বাইরে কাটাগারি বাজারে ব্যক্তিগত কাজে ছিলেন। তিনি টাকা নিয়ে বাসায় এসে থাকতে বলেন। রাজীব যথারীতি বাসায় আসেন। তখন মামি স্বর্ণা রানী সন্ধ্যাপূজা করছিলেন। পূজা শেষে মামী রাজীবকে কফি খাওয়ানোর জন্য নীচের দোকানে যান। সেই সুযোগে রাজীব মামাতো বোন পারমিতা সরকার ‍তুষির কক্ষে গিয়ে তাকে লোহার রড দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে মামী কফি কিনে বাসায় প্রবেশ করলে তাকেও পেছন থেকে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন।

এসব ঘটনার পর হতাশায় জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েন রাজীব। কিছুক্ষণের মধ্যে তার মামা বাসায় ঢুকলে তাকেও রড দিয়ে আঘাত করার পর গলাকেটে হত্যা করেন। এরপর মামী ও মামাতো বোন গোঙাতে থাকলে তাদের গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তিনজনের মৃত্যুর পর মরদেহ টেনে বেডরুমে রেখে মেইন দরজায় তালা মেরে পালিয়ে যান।

পুলিশ সুপার বলেন, আসামি রাজীবের দেওয়া তথ্যে তাড়াশে শ্রী উৎপল কর্মকারের পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রড ও তার নিজ বাড়ী থেকে হাসুয়া উদ্ধার করা হয়। এসব অস্ত্রে পাওয়া রক্তের নমুনা সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন