হোম অন্যান্যসারাদেশ অটোরিকশায় বাড়ছে এলপিজির ব্যবহার, প্রাণহানির শঙ্কা

অটোরিকশায় বাড়ছে এলপিজির ব্যবহার, প্রাণহানির শঙ্কা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 57 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:

জ্বালানি গ্যাস সিলিন্ডারের যথাযথ ব্যবহার না থাকায় প্রতিনিয়তই ঘটছে বড় বড় দুর্ঘটনা। এসব ঘটনা বিশ্লেষণে সঠিক উপায়ে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার না করাকে টাইম বোমের সঙ্গে তুলনা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তবে এসবের বাইরেও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দেখা মিলবে শত শত এলপিজি গ্যাস চালিত ৩ চাকার বাহন। আর এতে প্রতিনিয়ত জীবন ঝুঁকি নিয়ে চলছেন যাত্রীরা।

অল্প ভাড়ায় দ্রুত যাতায়াতের অন্যতম বাহন এ জ্বালানি গ্যাস চালিত অটোরিকশা। কাছের কিংবা দূরের যাত্রায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় তিন চাকার এ বাহন। তবে গ্যাস চালিত এ বাহনে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাহনটিতে পেছনে মনগড়া ভাবে ২ থেকে ৩টি পর্যন্ত সিলিন্ডার নিয়ে যাত্রী পরিবহন করে চলছে। এসব গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে অটোরিকশার জ্বালানি হিসেবে। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টাইম বোমের এসব গাড়িতে প্রতিদিন যাতায়াত করছেন নানা বয়সী হাজার হাজার যাত্রী।

সরজমিনে ঘোড়াঘাট উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের চার মাথা বাসস্ট্যান্ড থেকে কামদিয়া বাজার পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য যাত্রীর অপেক্ষায় সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে ৮ থেকে ১০টি অটোরিকশা। প্রতিটি অটোরিকশার পেছনে যাত্রী বসার সিটের সঙ্গে রাখা ২ থেকে ৩টি পর্যন্ত এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার। এসব সিলিন্ডারে চেপেই নিয়মিত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সহ নানা বয়সের যাত্রী।

একই চিত্র করতোয়া নদীর ত্রিমোহনীঘাটে। সেখানে সড়কের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে ১৫ থেকে ২০টি অটো। যাত্রী নিয়ে তারা নিয়মিত যাতায়াত করে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী চারমাথা মোড় পর্যন্ত। এসব অটোতেও রাখা একাধিক গ্যাস সিলিন্ডার।

একটি অটোরিকশায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত একাধিক গ্যাস সিলিন্ডার রাখার কারণ জানতে চাইলে অটোচালক এবং মালিকরা জানান, আগে তারা বগুড়া থেকে সিএনজি গ্যাস ভরিয়ে আনতেন। তবে দূরত্ব বেশি হওয়ায় এবং মহাসড়কে তাদের অটোরিকশা উঠতে না দেয়ায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করছেন। এই গ্যাসের বোতল তুলনামূলক ছোট হওয়ায়, একসাথে ২-৩টি সিলিন্ডার তারা গাড়িতে রাখছেন। যাতে যেকোনো মুহূর্তের একটি সিলিন্ডার শেষ হলে আরেকটি সিলিন্ডার তারা ব্যবহার করতে পারেন।

অটোরিকশায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে এসব গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করছেন সাধারণ মানুষ। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। হতে পারে প্রাণহানির মত মর্মান্তিক ঘটনা।

ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস লিকেজসহ যেকোনো ত্রুটির কারণে এসব জ্বালানি গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হতে পারে। অটোরিকশায় থাকা এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলে পেছনে বসে থাকা যাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে।

সিএনজিতে বসে ঘোড়াঘাট থেকে কামদিয়া যাচ্ছিলেন মহিলা ডিগ্রি কলেজে কর্মরত শান্ত ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই অটোরিকশায় যাতায়াত করি। আমাদের পেছনে গ্যাসের সিলিন্ডার দৃশ্যমান। তবে ঝুঁকি নিয়ে হলেও অন্যদের মত আমিও যাতায়াত করছি।’

আরেক যাত্রী আফ্রিদি কবির রাকা বলেন, ‘প্রতি বছরই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। তারপরেও আমরা অসচেতনতাবশত ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করি। তবে কোনো কারণে অটোতে থাকা এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে শরীরের অর্ধেক উড়ে যাবে।’

অটোরিকশা চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গত ১০ বছর যাবত অটোরিকশা চালাই। শুরু থেকেই গ্যাস দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। আগে বগুড়া থেকে গ্যাস নিয়ে আসতাম। এখন স্থানীয় দোকান থেকে এলপিজি এবং মাঝেমধ্যে স্টেশন থেকে এলএনজি গ্যাস নিচ্ছি। ছোট্ট একটি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ বার যাতায়াত করা যায়। তবে কোনো সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।’

ঘোড়াঘাট ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নিরঞ্জন সরকার বলেন, ‘অটোরিকশায় এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। পুরাতন সিলিন্ডার রং করে নতুন করা হচ্ছে। এবং একাধিকবার রং করার কারণে সিলিন্ডারের ওপরে খোদাই করা মেয়াদের তারিখ মিশে গেছে। যত্রতত্র এসব সিলিন্ডার ব্যবহারের ফলে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটে আসছে। আমরা বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন