হোম জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণহত্যার বিচারের আশা আসিফ নজরুলের

নির্বাচনের আগেই গণহত্যার বিচারের আশা আসিফ নজরুলের

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 9 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, আমাদের আশা আছে, বিশ্বাস আছে— যে গতিতে এগোচ্ছি ইনশাআল্লাহ, সামনের নির্বাচনের আগে অন্তত ট্রায়াল কোর্টে (সাম্প্রতিক গণহত্যার) বিচার কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। তিনি বলেন, ‘এখানে কারও কোনও প্রকার গাফিলতি নাই। আপনাদের কাছে আমাদের প্রতিজ্ঞা— অবশ্যই বাংলাদেশে যে নির্মম অমানবিক গণহত্যা হয়েছে, সরকার তার বিচার করবে।’

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি নিশ্চিতভাবে বলতে চাই, বিচারের কার্যক্রম অত্যন্ত সাবলীলভাবে চলছে। আমরা বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছি— আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওপর। এখানে রাষ্ট্রপক্ষের অংশগ্রহণ বেশি। ফলে আমরা এটাকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যেই গতিতে মামলার তদন্ত কাজ চলছে, আশা করছি— আগামী মার্চ থেকে শুনানি শুরু হতে পারে।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, সংস্কার নিয়ে আমাদের কর্ম পরিকল্পনার চারটা ধাপ ছিল। একটা হচ্ছে কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট প্রণয়ন করবে, তাদের সুপারিশ দেবে। দ্বিতীয় হচ্ছে, কমিশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা হবে। এই লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনের নেতৃত্বে আছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংস্কার কমিশনের প্রধানরা এখানে সদস্য হিসেবে আছেন। ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা প্রয়োজনীয় আইন এবং নীতি প্রণয়ের কাজ শুরু করা। চতুর্থ ধাপে বাস্তবায়ন। আমাদের প্রত্যাশা আছে, আমরা পুরো কাজটা সম্পূর্ণ করে যেতে পারবো। নির্ভর করছে, রাজনৈতিক দলগুলো কত টুকু সংস্কার করতে ঐকমত্য হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ১৬ ডিসেম্বরের ভাষণে বলেছেন যে, আমরা ন্যূনতম কিছু সংস্কার সম্পূর্ণ করে যদি নির্বাচন করতে চাই— তাহলে এই বছর হবে। যদি আমরা আরও কিছু সংস্কার প্রত্যাশিত মাত্রা অনুযায়ী করতে চাই— তাহলে কয়েক মাস লাগতে পারে, সেটা হচ্ছে সামনের বছরের জুনের মধ্যে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যখন আমরা আলাপ-আলোচনা করবো, তখন দেখবো যে, ন্যূনতম সংস্কার কোনগুলো আছে। এর বাইরে প্রত্যাশিত সংস্কার চিহ্নিত করার চেষ্টা করবো।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, চারটি কমিশন তাদের রিপোর্ট এবং সামারি দিয়েছে। এই সামারিগুলো আপনাদের জন্য আজকেই অ্যাভেইলেবল করে দেওয়া হবে। কমিশনগুলো তাদের ওয়েবসাইটে অ্যাভেইলেবল করে দেবে। যে রিপোর্টগুলো আমাদের কাছে এসেছে, সেই কমিশনের প্রধানরা স্বাধীনভাবে কাজ করেছেন। এখন কমিশন প্রধানরা সেই রিপোর্টগুলো নিয়ে বসবেন। বসে এখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে, কোথায় কোথায় তাদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত, তারা ঠিক করবেন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) প্রজ্ঞাপনে ছয়টি কমিশনের কাজের সময় আরও একমাস বাড়িয়ে দেওয়া হবে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যেকটি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়া হবে। তারা যেহেতু স্বাধীনভাবে কাজ করেছেন, এখন সমন্বয়ের কাজটি কমিশন করবে। তারাই ঠিক করবেন কোন কাজ আগে করতে হবে, কোনগুলোতে বেশি জোর দিতে হবে। কোনগুলো নিয়ে আমরা তাৎক্ষণিক কাজ শুরু করবো, রোডম্যাপ কী হবে— আমরা এক মাসের মধ্যে রোডম্যাপ দিতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।

বাড়তি সময় প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, বাড়তি সময় লাগছে কারণ কমিশনের কিছু কিছু রিপোর্টে ওভারল্যাপিং আছে। আবার কিছু কিছু সমন্বয় করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কমিশন নির্বাচনের টাইমলাইনের সঙ্গে সম্পর্কিত করে একটি রোডম্যাপ করে দেবেন।

সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ করা হবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ার শুরু হয়েছে যে কনটেক্সটে সেটি যেন আমরা ভুলে না যাই। কনটেক্সট হচ্ছে একটা গণঅভ্যুত্থান। এখন যদি আমাদের সবকিছু আইনি কাঠামো ধরে বলা হয়, তাহলে গণঅভ্যুত্থানের যে চেতনা, আকাঙ্ক্ষা সেটি আমাদের অ্যাড্রেস করা দুরূহ হয়ে পড়ে। আমরা গণঅভ্যুত্থানকে হৃদয়ে ধারণ করেছি এবং সংস্কারের ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দল কাউকে কিন্তু বারণ করা হয়নি। সব রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিয়েছে। আজকে কমিশন যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, সেখানে সব রাজনৈতিক দলের লিখিত বক্তব্য প্রতিফলন হয়েছে। কমিশন যতটুকু নেওয়া প্রয়োজন মনে করেছে নিয়েছে। কমিশনের কাজ নিয়ে চারটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে ধাপ আরও বাড়বে। কিন্তু রাজনৈতিক মতঐক্যের ভিত্তিতে হবে। আমরা আশা করি, সব দলের ঐকমত্য আসবে। তারপরও আমরা আশা করি, লেজিটেমিসি না থাকার কোনও প্রশ্ন থাকছে না।

তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি, কাউকে টার্গেট করে বিচার করা হচ্ছে না। একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে বিচার হচ্ছে। আমরা যেহেতু কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করিনি, রাজনীতিতে কোন দল কী অবস্থানে থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত সেই দল নেবে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নির্ভর করছে না।

একই প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিভিন্ন আইন আছে। আর যুদ্ধাপরাধীদের দায়ে বিচারের কথা সংবিধানে আছে। আমরা করিনি বা আমরা করবো না, সেটি কথা না। আমরা বিচারিক প্রক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। সুষ্ঠুভাবে বিচার হওয়ার পর আমরা গণহত্যার সঙ্গে দল সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে যে ধরনের রায় পাবো তার ওপর ভিত্তি করে বহু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ আমরা পাবো।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন