জাতীয় ডেস্ক:
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) আস্তানার সন্ধান পেয়েছে র্যাব। সেখানে থেকে ১২ ঘণ্টার অভিযানে অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেলসহ দুই জনকে আটকও করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) দিবাগত রাত ৩টা থেকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন লাল পাহাড়ে এ অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে উদ্ধার করা হয় পাঁচটি রকেট সেল, তিনটি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, একটি বিদেশি রিভলবার, ৯ রাউন্ড পিস্তলের এ্যামুনিশন, একটি এলজি এবং তিনটি ১২ বোর কার্তুজ।
পরে সেখানে সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট বুধবার (১৫ মে) দুপুর ২টার দিকে গ্রেনেড ও রকেট সেলগুলো নিস্ক্রিয় করেছে।
রামুস্থ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ক্যাপ্টেন নাদিয়া নুসরাত বলেন, ‘বিস্ফোরকগুলো খুবই নাজুক অবস্থায় ছিল। যেহেতু তীব্র গরম পড়ছে এগুলো যেকোনো মুহুর্তে বিস্ফোরিত হতে পারত। তাই অনেক সাবধানতার সঙ্গে গ্রেনেড ও রকেট সেলগুলো নিস্ক্রিয় করা হয়েছে।’
ক্যাপ্টেন নাদিয়া নুসরাত আরও বলেন, ‘গ্রেনেড ও রকেট সেলগুলো বিদেশ থেকে আসা। তবে কোন দেশের তা নিশ্চিত করা যায়নি।’
অভিযানে আটক করা হয়েছে আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দুল আবেরার ছেলে মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম (৩৮) ও সলিমের অন্যতম সহযোগী ৮ নম্বর ক্যাম্পের মৃত মোহাম্মদ নুরের ছেলে মো. রিয়াজ (২৭)।
অভিযান শেষে বেলা ১২টায় ঘটনাস্থলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত ইসলাম জানান, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনার প্রেক্ষিতে র্যাব-১৫ গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারি শুরু করে। এর সূত্র ধরেই জানা যায় মাস্টার সেলিম বর্তমানে বাংলাদেশে আরসার প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে পুনরায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাব। এসময় দুই আরসা সন্ত্রাসীকে আটক করে তাদের থেকে অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেল উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত ইসলাম জানান, শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সেলিম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে প্রবেশ করে ১৫ নম্বর ক্যাম্পে বসবাস শুরু করেন। তিনি মিয়ানমারে থাকাকালীন সেখানকার আরসা জোন কমান্ডারের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবে দুই মাস দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে আসার পর মৌলভী আকিজের মাধ্যমে আরসায় পুনরায় যোগদান করেন। আরসার হয়ে আধিপত্য বিস্তার কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। আর রিয়াজ তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।
তাদের উখিয়া থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
আরাফাত জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কারণে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ২০২৩ সালে ৬৪ জন এবং ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে হত্যা করেছে। এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্মূলে র্যাব শুরু থেকেই বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারি চালু রেখেছে। এই প্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত ১১০ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।