অনলাইন ডেস্ক:
পঞ্চগড়ে পৃথক উপজেলায় নিখোঁজের দুইদিন পর মাটিচাপা অবস্থায় টাবুল বর্মন (৪৮) ও নিখোঁজের ৭ দিন পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নুরুল ইসলাম (৪০) নামে দুই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) মরদেহ উদ্ধারের পর বেরিয়ে আসে হত্যার মূল কারণ।
পুলিশ বলছে, পরকীয়াই কাল হয়েছে টাবুলের। প্রেমিকার ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে হত্যার শিকার হন তিন। এদিকে পরিকল্পিত ছিনতাইয়ের কারণে নুরুলের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন পুলিশ সুপার এসএস সিরাজুল হুদা।
মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে খুনি ভাড়া করে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার কৃষক টাবুল বর্মনকে কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন পরকীয়া প্রেমিকা ললিতা রানী। অপরদিকে জেলার বোদা উপজেলায় ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্য ভায়রা ইজিবাইক চালক নুরুল ইসলামকে সহযোগীদের নিয়ে হাতপা বেধেঁ শ্বাসরোধে হত্যা করেন ভায়রা জালাল বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানা গেছে, গত ৩১ জানুয়ারি মাগুরা ইউনিয়নের লাখেরাঘুমটি গ্রামের মৃত ভগিরাম বর্মনের ছেলে টাবুল বর্মন নিখোঁজ হয়। এর পর তার ছোট ভাই গোবিন্দ চন্দ্র বর্মন নিখোঁজ সংক্রান্তে গত ০১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় সদর থানায় একটি সাধারন ডাইরী (সাধারন ডাইরি নং-২৮, তারিখ-০১/০২/২০২৪ খ্রি.) করেন। এরপর পুলিশ তদন্ত শুরু করলে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ও বিভিন্ন উৎস থেকে ভিকটিমের সবশেষ অবস্থান হাড়িভাসা এলাকায় পাওয়া যায়। ভিকটিমের সঙ্গে প্রতিবেশী (পরকীয়া প্রেমিকা) মন্টু বর্মনের স্ত্রী ললিতা বর্মন (৪০) ও তার মেয়ে মনিকা রানী বর্মন (২০) এবং হাড়িভাসা এলাকার তুলেন চন্দ্রের ছেলে জামাই প্রভাত চন্দ্র রায়ের (৩৩) মোবাইল নম্বরের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এর মাঝে ভিকটিম টাবুলের নিখোঁজের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় পুলিশ। জানা যায়, টাবুল দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী ললিতার সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রাখে (পরকীয়া)। একপর্যায়ে ললিতাকে গোপন একটি মোবাইল ও সিম কিনে দেয় এবং যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। কিন্তু ছেলে মেয়ে বড় হয়ে যাওয়ায় সম্মানের দিকে তাকিয়ে ললিতা এই অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে যেতে না চাইলেও টাবুল সম্পর্ক অব্যাহত রাখে। একপর্যায়ে ললিতা ক্ষুব্ধ হয়ে তার পুরুষাঙ্গ কেটে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ললিতা বিষয়টি পরিচিত রফিকুল ইসলাম ও মোন্তাজকে ব্যবহার করে টাবুলকে হত্যার জন্য ৩০ হাজার টাকার চুক্তি করেন।
পরবর্তীতে ললিতা বর্মন ৩ দফায় মোন্তাজ ও রফিকুল ইসলামকে ১৮ হাজার টাকা দেয়। ঘটনার দিন পরিকল্পনা মতে (৩১ জানুয়ারি) ললিতা ভিকটিমকে ফোনে হাড়িভাসা জয়গুন মার্কেট এলাকায় ডেকে নিয়ে জামাতা প্রভাসের মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে চাকলারহাট ডোলোপাড়া গ্রামে ঘটনাস্থলে নিয়ে মোন্তাজ ও রফিকুলের মাধ্যমে ধারালো ছোট কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। গ্রেফতারের পর ললিতার দেয়া তথ্যমতে ঘটনাস্থল থেকে মাটি খুড়ে লাশ উত্তোলন করা হয় এবং হত্যার কাজে ব্যবহৃত কুড়ালটি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
এদিকে, গত ২৭ জানুয়ারি জেলার বোদা উপজেলার কাউয়াখাল গ্রামের মৃত ইয়াছিন আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম নিজ বাড়ি থেকে ব্যাটারিচালিত অটোগাড়ি নিয়ে বের হয়। গভীর রাত হওয়ায় নুরুল বাড়িতে না ফেরায় বোদা থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করা করে পরিবার (জিডি নং-১৬৬৩, তারিখ: ২৮/০১/২০২৪)। এরপর থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় দেবীগঞ্জের দেবীডোবা ইউপির সুলতানপুর ছলিপাড়া ধামের সামনে পরিত্যক্ত অবস্থায় ভিকটিমের ব্যবহৃত ব্যাটারিচলিত অটোরিকশা উদ্ধার করে।
এরপরেও ভিকটিমের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় নুরুলের স্ত্রী শেফালী বেগম বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করলে (বোদা থানার মামলা নং-৩৩, তারিখ ৩০/০১/২০২৪, ধারা-৩৮৬/৩৬৫/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০) মামলার প্রাথমিক তদন্তে প্রযুক্তিগত সহায়তায় মামলার ঘটনার সঙ্গে সন্দিগ্ধ আসামি কুমারপাড়া গ্রামের মৃত ওমর আলীর ছেলে আলমকে (২৪) গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি আলম তার ৩/৪ জন সহযোগীসহ একটি অটো ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামত গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ৩/৪ জন সহযোগীসহ মাড়েয়া বাজার এলাকা থেকে সাওতালপাড়া ঘাট এলাকায় যাওয়ার জন্য নূরুল ইসলামের অটো ভাড়া করে। নূরুল ইসলাম মাড়েয়া বাজার থেকে সাওতালপাড়া ঘাট এলাকার পৈাছালে আসামি আলমসহ তার সহযোগীরা মিলে ভিকটিম নূরুল ইসলামকে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে করতোয়া নদীতে ফেলে দেয়।
পরে শুক্রবার বিকেলে একই এলাকা থেকে নুরুলের ভাসমান মরদেহ স্থানীয়দের মাধ্যমে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে পুলিশ।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে মরদেহ উদ্ধারসহ এর সাথে জড়িতদের সনাক্ত করেছি। ইতিমধ্যে ২-৩ জন আটক হলেও পৃথক দুই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।