রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর) :
অগ্নিদগ্ধ ফায়ারম্যান গাওসুল আজম (২৩) নিয়ে চিকিৎসকরা যখন ব্যস্ত তখনো পিতা আজগার আলীসহ তার পরিবার জানেননা ছেলের দু:সংবাদের কথা। রোববার ঘড়ির কাটায় যখন সকাল সাড়ে ৭টা তখন তাদের মোবাইলে শুধুই রিং হচ্ছে। পিতা আজগার আলী ফোনটি রিসিভ করতেই চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার সার্ভিস কার্যালয় থেকে জানানো হয় ছেলে গাওসুল আজম অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালের বেডে। মুহুর্তেই পরিবারে যেন বর্জপাতের মতো দু: সংবাদ।
মণিরামপুরের খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের আজগার আলীর একমাত্র ছেলে ফায়ারম্যান গাওসুল আজম। ২০১৮ সালে এ চাকুরীতে তার ফায়ারম্যান পদে যোগদান। বর্তমানে তার কর্মস্থল বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থানাতে। ছয়মাসের ডেপুটেশন হিসেবে কর্মব্রত চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার ষ্টেশনে।
শনিবার রাত ৮টার দিকে যখন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতেই সেখানে ছুটে যান গাওসুলসহ তার সহকর্মীরা। সেখানেই তার গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। এতে তার সহকর্মীদের মৃত্যু ঘটলেও গাওসুল আজম এখনো প্রাণে বেঁচে আছেন। রাতেই তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালে আনা হয়।
প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ফায়ারম্যান গাওসুল আজমের শরীরের বিভিন্ন অংশে ৭৫% পুড়ে গেছে। সকালে খবর পেয়ে পিতা আজগার আলী, চাচা আকবার আলী, একমাত্র ভগ্নিপতি মিজানুর রহমানসহ আত্বীয় স্বজনরা ছুটে গেছেন ঢাকাতে। গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদক গাউসুল আজমের খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে গেলে চোখে পড়ে কেবল মানুষের ভিড়। গ্রামের নারী-পুরুষ যেন সকলেই বাকরুদ্ধ।
গাওসুল আজমের মা আছিয়া বেগম কেবল বুকে হাত থাপড়াচ্ছেন। আর মুর্ছা যাচ্ছেন, বলছেন আমার বাবাকে আল্লাহ তুমি আমার কাছে সুস্থ্য করে ফিরিয়ে দাও। তোমার কাছে আমার ছেলের ভিক্ষা চায়। গাউসুল আজমের ছয়মাস বয়সী একমাত্র ছেলে সিয়াম মানুষের ভিড়ে প্রতিবেশীদের কোলে রয়েছে। নির্বাক তার স্ত্রী কাকলী খাতুন। কোনই কথা বলতে পারছেন না তিনি। গাওসুল আজমের এই দু:সংবাদে কেবল পরিবার নয়, খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামবাসীকে বাকরুদ্ধ করে ফেলেছে।