হোম অন্যান্যসারাদেশ সিলেটে ঘুরতে আসা ৮ তরুণ-তরুণীকে আটকে কাজী ডেকে বিয়ে, রিসোর্টে অগ্নিসংযোগ

সিলেটে ঘুরতে আসা ৮ তরুণ-তরুণীকে আটকে কাজী ডেকে বিয়ে, রিসোর্টে অগ্নিসংযোগ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 13 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
সিলেটের মোগলাবাজারে একটি রিসোর্টে ঘুরতে আসা আট তরুণ-তরুণীকে আটকের পর আসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এ সময় রিসোর্টের একটি অংশে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে মোগলাবাজার থানা এলাকার রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে এ ঘটনা ঘটে। বিকালে কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ঘোষণায় রিসোর্টটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেয়।

মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দুপুরে স্থানীয় লোকজন অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে রিসোর্টের ভেতরে যান। এ সময় কে বা কারা সেখানে অগ্নিসংযোগ করে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ছেলেমেয়েদের বিয়ের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এলাকার জনগণ তাদের আটক করছে; আমাদের কাছে দেয়নি। একই সময়ে রিসোর্টে থাকা আরও আট তরুণ-তরুণীকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’

আট তরুণ-তরুণীর বিয়ে পড়িয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের কাজী আব্দুল বারী। তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসী ছেলেমেয়েদের আটক করেন। তারপর আমাকে খবর দিয়ে নেওয়া হয়। তখন এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে চার ছেলে ও চার মেয়ের বিয়ে পড়ানো হয়। এর মধ্যে তিনটি বিয়ের দেনমোহর ১০ লাখ; আরেকটির দেনমোহর ১২ লাখ টাকা ধরা হয়। এসব ছেলেমেয়ে সিলেটের বিশ্বনাথ, মোগালাবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ ও দুক্ষিণ সুরমার এলাকার বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছেন। বিয়ের সময় কয়েকজন বিএনপি নেতা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রিসোর্টের কক্ষ ভাড়া নিয়ে নানা অসামাজিক কাজ হয়। এটা জানতে পেরে দুপুর ২টার দিকে তারা সেখানে হানা দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় মোগলাবাজার থানা পুলিশ। পরে এলাকার মুরুব্বিরা তাদের অভিভাবকদের খবর দেন। পরে আট তরুণ-তরুণীর বিয়ে পড়ানো হয়।

এ ঘটনার পর থেকে রিজেন্ট পার্ক রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। ফলে তাদের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিকালে তাদের ফেসবুকে রিসোর্টটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

ঘটনাস্থলে থাকা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সিলেট জেলার সদস্যসচিব তাজরুল ইসলাম তাজুল বলেন, ‘অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে আটক শুনে এলাকার প্রায় দুই হাজার মানুষ এসেছিলেন রিসোর্টে। আমরা চেষ্টা করেছি, যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। এজন্য রিসোর্টের গেট বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু অনেকে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। রিসোর্টে আগুন জেনারেটর থেকে লেগেছে। তবে কোনও রুমে আগুন লাগেনি। অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ১৬ জন ছেলেমেয়েকে আটক করেছিল এলাকাবাসী। এর মধ্যে আট জনের বিয়ে এবং বাকি আট জনকে পরিবারের সদস্যদের কাছে দেওয়া হয়েছে।’

দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঊর্মি রায় বলেন, ‌‘রিসোর্টে শুনেছি কী একটা ঝামেলা হয়েছে। তবে বিয়ের বিষয়ে কেউ আমাকে অবগত করেননি।’

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে ১৬ জন ছাত্রছাত্রীকে রিসোর্টে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় কয়েকজনকে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেন এলাকাবাসী। পরে পুলিশ জানতে পারে কাজী ডেকে কয়েকজনকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিয়ের বিষয়টি পুলিশ আগে জানতো না। তবু কেউ যদি মনে করে তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন