মনিরামপুর প্রতিনিধি:
মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর ভূমি সহকারি কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ মল্লিকের অনিয়ম ও দূর্নীতি যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে। লাগামহীন অনিয়ম ও দূর্নীতির কারনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এলাকার অনেক ভূক্তভোগী যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পায়নি। বরং অভিযোগ উঠেছে বিষ্ণুপদ মল্লিকের অনিয়ম ও দূর্নীতি দিন দিন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলাকার ভূক্তভোগীরা এখন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। যেকোন মুহুর্তে তাকে নিয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, ভূমি সহকারি কর্মকর্তা বিঞ্চুপদ মল্লিকের গ্রামের বাড়ি মনিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের পদ্মনাথপুরে। অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালে তিনি গোপালপুর তহশিল অফিসের ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরি করাকালীন সময়ে হতদরিদ্রদের জন্য মাছনা এলাকায় সরকারি জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে গুচ্ছ গ্রামে নির্মাণ করা হয় বেশ কয়েকটি ঘর। কিন্তু হতদরিদ্রদের বাদ দিয়ে পাকাবাড়ি, পুকুর আছে এমন ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ, কবির হোসেন, ফরিদা খাতুন, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ পাঁচজনের নামে পাঁচটি ঘর বরাদ্দ করেন। প্রতিজনের কাছ থেকে লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তিনি ওই পাঁচটি ঘর পাইয়ে দেন। ফলে বঞ্চিত হওয়া এলাকার হতদরিদ্ররা তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেন। কিন্তু কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি প্রশাসন থেকে। এছাড়া জমির খাজনা দিতে গেলে তাকে প্রতি শতকে এক’শ টাকা হারে ঘুষ দিতে হতো। এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর তোপের মুখে তিনি ২০২২ সালে বদলি হয়ে পাশর্^বর্তী নেহালপুর তহশীল অফিসে যোগদান করেন। কিন্তু কথায় আছে কয়লা ধুলে ময়লা যায়না। নেহালপুরে যোগদান করেই তিনি আরো দূর্নীতিবাজ হয়ে পড়েন। দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে মনোহরপুর ইউনিয়নের খাকুন্দি গ্রামের মৃত কিংকর সরকারের একমাত্র মেয়ে জয়ত্রী রানী সরকারের ওয়ারেশ বাদ দিয়ে সুফল নামে এক ব্যক্তির নামে প্রায় দুই বিঘা জমির নামপত্তন করে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তৎকালিন সহকারি কমিশনার (ভূমি) আলী হোসেন সেই নামপত্তন বাতিল করেন। ইউপি সদস্য প্রভাষ ঘোষ জানান, এ ধরনের অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি নেহালপুর ইউনিয়নের বালিধা গ্রামের নুর মোহাম্মদ গাজী পাঁচ শতক জমির ওপর পাকাবাড়ি নির্মাণ করে দুই ছেলে কামরুজ্জামান ও মঈনুল ইসলামকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু বাড়িসহ জমি নিয়ে দুভাইয়ের মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়। একপর্যায়ে তারা আদালতের শরনাপন্ন হয়। আদালতের নির্দেশে দু’ভাইয়ের দখলস্বত্ব নিয়ে প্রতিবেদন দিতে দায়িত্ব দেওয়া হয় সহকারি ভূমি কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ মল্লিককে। কিন্তু ৩ ডিসেম্বর মোঃ মঈনুল ইসলাম মনিরামপুর সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় সরজমিন তদন্ত বিষয়ে মঈনুলকে না জানিয়ে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে বড়ভাই কামরুজ্জামানের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন ওই তহশীলদার। তবে ঘুষ নেওয়াসহ সব অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারি ভূমি কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ মল্লিক জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দসহ সকল তদন্তে যা পাওয়া গেছে সেভাবেই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুম জানান, বিষ্ণুপদ মল্লিকের বিরুদ্ধে সকল অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।