সংকল্প ডেস্ক:
চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অনেকে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে নগরের কোতোয়ালি থানার লালদীঘি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়া উপজেলার জামাল উদ্দিনের ছেলে।
জানা গেছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আদালত চত্বরে তাকে বহনকারী পুলিশের প্রিজনভ্যান আটকে রাখেন সমর্থকরা। অনুরোধের পরেও তাদের সরাতে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এরপরই বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে লালদীঘির রঙ্গম কনভেনশন হলের সামনে অবস্থান নেন।
এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অনুপস্থিতিতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অনেকে আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম আলিফকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিন আদালতের কেন্দ্রীয় মসজিদের জানালার কাচ এবং আইনজীবীদের তিনটি প্রাইভেটকার ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা।
এর আগে, দুপুরে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্টদ্রোহ মামলায় ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপরই আদালত এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন তার সমর্থকরা।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ। চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার নিউমার্কেট মোড়ের স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে হওয়া মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়।
গত ৫ আগস্টের পর দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীর নামে কয়েক দফা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেসব সমাবেশ থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বর্তমান সরকারের উদ্দেশে নানা ধরনের হুমকি-ধামকিমূলক বক্তব্য রাখেন। এর আগে থেকে তিনি আলোচনায় থাকলেও গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সমাবেশে বেশি আলোচনায় আসেন।
ঐ সমাবেশ করা হয় বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের নামে। সমাবেশে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসই বাংলাদেশের হিন্দুদের মঠ-মন্দিরে হামলা বাড়িঘরে লুট, অগ্নিসংযোগসহ নানা অভিযোগ করেন। অথচ তার বিরুদ্ধেই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় তিনি উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আলোচিত হিন্দু সংগঠন ইসকনের অন্যতম সংগঠক। তিনি সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি চিন্ময় প্রভু নামে পরিচিত। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ।
গত ৩০ অক্টোবর সনাতন ধর্মবিশ্বাসী সংগঠন আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) আলোচিত সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এ মামলা দায়ের হয়। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা হলেন- রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ।
মোহাম্মদ ফিরোজ খান নামে একজন বাদী হয়ে নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্ত, নগরের প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলা রাজ দাশ ব্রহ্মচারী, গোপাল দাশ টিপু, ডা. কথক দাশ, প্রকৌশলী অমিত ধর, রনি দাশ, রাজীব দাশ, কৃষ্ণ কুমার দত্ত, জিকু চৌধুরী, নিউটন দে ববি, তুষার চক্রবর্তী রাজীব, মিথুন দে, রুপন ধর, রিমন দত্ত, সুকান্ত দাশ, বিশ্বজিৎ গুপ্ত, রাজেশ চৌধুরী এবং হৃদয় দাস। একই মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ অগস্ট গণঅভুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা নিউমার্কেট মোড়ে একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। গত ২৫ অক্টোবর লালদিঘী মোড়েসমাবেশের দিন ঐ পতাকার ওপর সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে স্থাপন করে দেওয়া হয়, যা রাষ্ট্রের অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার সামিল।
এজাহারে আরো বলা হয়, জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে আসামিরা দেশের ভেতর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর করার রাষ্ট্রদোহ কাজে লিপ্ত আছে।