হোম খুলনাসাতক্ষীরা লুটপাটের পরে শুরু হয়েছে নীরব চাঁদাবাজি, টার্গেট সংখ্যালঘু ও আ.লীগ

লুটপাটের পরে শুরু হয়েছে নীরব চাঁদাবাজি, টার্গেট সংখ্যালঘু ও আ.লীগ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 32 ভিউজ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

চাঁদা দিতে হবে, তা না হলে বাড়িঘড় ভাঙচুর করবো। সবকিছু আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবো। এভাবেই গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে গণহারে চাঁদাবাজি। ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা ধার্য করা হচ্ছে। কিন্তু যানমালের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। শেখ হাসিনা সরকার পতনের ৪৮ঘন্টার মধ্যে শুরু হয় ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। কিন্তু সেনাপ্রধান দুবৃত্তদের আইনের আওতায় আনার ঘোষনা দিলে অপরাধী চক্র কৌশল পরিবর্তন করে। পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ায় কেউ আর এখন কারো কথা শুনছে না। বিএনপি-জামাত নেতৃবৃন্দ সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানালেও দলের ক্যাডার বাহিনী ও দুবৃত্তরা তা মানতে চাইছে না। জীবন বাঁচাতে আ.লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সারা দেশের ন্যায় তালা উপজেলা জুড়ে আ’লীগ নেতাসহ সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় বাদ পড়েনি সেনা কর্মকর্তা , শিক্ষক, সাংবাদিকসহ জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি।

অপরদিকে গ্রামে গ্রামে বিএনপি ও জামায়তের লোকজন পাহারা বসালেও বন্ধ হচ্ছেনা লুন্ঠনকারীদের চাঁদাবাজি ও ধ্বংসযজ্ঞ।প্রশাসনের নিষ্কৃয় ভুমিকার কারনে আতঙ্ক গ্রস্থ হয়ে পড়েছে জনসাধারন।গত সোমবার থেকে তালা উপজেলা দেড় থেকে দুই শতাধিক বাড়ি ভাংচুর ও লুট হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা ।হামলার কারীর কোন দলীয় সর্মথক তার নিদৃষ্ট কোন পরিচয় মেলেনি।

তালা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার পতনের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যে নৃশংসতা হয়েছে তা একাত্তরের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। খলিশখালি ইউনিয়নের হাজারাপাড়া এলাকার সেনা কর্মকর্তা শিবাজী লাহেড়ী জানান,তিনি কর্মসুত্রে চট্রগ্রামে চাকুরী করেন, সরকার পতনের পর পরই মঙ্গল বার রাতে একদল দূর্বিত্তরা তার বাড়িতে এসে জিনিস পত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। এসময় তারা বাড়ির ভিতরে মন্দির ভাংচুর করে রান্না ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে যায়।

পাটকেলঘাটা বাজারে ব্যাবসায়ী ফয়সাল হোসেন শুভ জানান,তার বাবা হাসান হোসেন বাবু বিএনপি দলীয় সর্মথক ছিলেন। চাচা জেলা আওয়ামীলীগের গুরত্বপূর্ন পদে থাকার কারনে সোমবার রাতে দূর্বিত্তরা প্রথমে তাদের বাড়িতে হামলা করে।পরে তার এবং বাবার ব্যাবসা প্রতিষ্টানে হামলা চালিয়ে দেড় কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় দূর্বিত্তরা।

পাটকেলঘাটা বাজারের ব্যাবসায়ী রুপায়ন হাজরা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা পতনকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকালে একটি আনন্দ মিছিল বের হয় পাটকেলঘাটা বাজারে।এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার দোকানে লুটাপাট চালায় একদল দূর্বিত্ত। ওই সময় তারা দোকান ভাংচুর করে ৩০/৪০লক্ষ টাকার মালামাল লুটে নিয়ে যায়।

মাগুরা ইউপি চেয়ারম্যান গনেশ দেবনাথ জানান, মঙ্গবার রাত ১০ টার দিকে তার বাড়িতে একদল দূর্বিত্তরা
গিয়ে লুটপাট অগ্নিসংযোগ ভাংচুর ও নগদ টাকা স্বর্নঅলংকার নিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, এর পর যাবতীয় আসবাবপত্র আগুন ধরিয়ে দেয়।

স্কুল শিক্ষক বিশ্বজিত লাহিড়ী জানান,মঙ্গলবার ৭/৮ জনের একদল মুখোশধারী ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার পরিবারের সবাই কে জিম্মি করে বেধড়ক মারপিট করে জখম করে। এ সময় ডাকাত দল নগত ৭০ হাজার টাকা ও ৫ ভরি স্বর্নালঙ্কার নিযে ঘটনাস্হল ত্যাগ করে।

খলিষখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মঙ্গলবার রাতে খলিষখালী বাজারের সজলের মুদি দোকানে লুটপাট করে পালিয়ে যায় দূর্বিত্তরা । এ ছাড়া ঘটনার দিন রাতে তার বাড়ি সহ একই এলাকার কৃষকলীগ নেতা বিধান দাশ, আ”লীগ নেতা বিশ্বনাথ দাশ,নীল কোমল দাস,সজ্ঞয় দাস,বিল্লু দাস সহ, খলিষখালী এলাকার স্বজল দে,সুজায়েত, রনি গাজী ছাত্তারের দোকান সহ দুধলী এলাকার অলোক রায় সহ কয়েকজনের বাড়িতে লুটপাট করেছে দূর্বিত্তরা। বর্তমানে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রান ভয়ে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ।

কুমিরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে দুর্বৃত্তরা তার বাড়ি লুটপাট করে আগুন জালিয়ে দেয় । এসময় তাকে হত্যার চেষ্টা করলে তিনি পালিয়ে সে যাত্রা রক্ষা পান।

এছাড়া কুমিরা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের বাড়ি সহ এলাকার ২০/৩০ জন সংখ্যালঘুর বাড়ি ও দোকান পাট লুট করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তালা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রনব ঘোষ বাবলু জানান, সোমবার সন্ধ্যার দিকে তালা বাজারে আনন্দ মিছিল চলছিল।এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একদল দূর্বিত্ত তার বাড়িতে এসে লুটপাট করে।এসময় তার বৃদ্ধ মাকে মারপিট করে বাড়িতে আগুন জালিয়ে দেয়।

তিনি আরো জানান, ঘটনার দিন উপজেলার চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের বাড়ি, ইসলামকাটির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সুভাষ সেনের বাড়ি সহ অনেক সংখ্যালঘুদের বাড়িতে লুটপাট করা সহ অগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।বর্তমানে সকলে নিরাপর্তাহীনতায় ভুগিতেছেন।

খলিষখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সাংবাদিক মোজাফফর রহমান জানান, সরকার পতনের পরে মঙ্গলবার সকালে তার পাটকেলঘাটা বাজারে বাড়ি দখল করে নেয় দূর্বিত্তরা।ঘটনার পর পরই তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ভাংচুর চালিয়ে জিনিস পত্র লুট সহ টাকা নিয়ে যায়।ওই সময়ে তারা বাড়ির ভিতরের চারটি গরু জোর পূর্বক নিয়ে যায়। এরপর থেকে হামলাকারীদের মধ্যে আবু সেলিম নামের একজন তার শালক মনোয়ার আলম মিশুর কাছে দশ লক্ষ টাকা চাঁদাদাবী করে আসছে।

তালা উপজেলা বিএন পি সভাপতি মৃনাল কান্তি রায় জানান,উপজেলার জুড়ে যে হামলার ঘটনাঘটেছে দায়ভার কে নিবে এটাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে হামলা ও লুটপাট বন্ধে বি এন পির উপরিমহলের নির্দেশে স্হানীয় বি এন পির নেতৃবৃন্দ কমিটি করে পাহারা বসিয়েছে। যেন আর কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য সকলকে সর্তক থাকার আহবান জানান।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন