হোম জাতীয় যাত্রী কল্যাণ সমিতি: বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে গোজামিল

যাত্রী কল্যাণ সমিতি: বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে গোজামিল

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 94 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) করা সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে গোজামিল আছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে সরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

মোজাম্মেল হক বলেন, বিআরটিএর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৩ সালে ৫ হাজার ৪৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ২৪ জন নিহত, ৭ হাজার ৪৯৫ জন আহত হয়েছে। এই সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বিআরটিএ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এখানে কোনো হাসপাতালের তথ্য নেয়া হয়নি।

বিআরটিএ কর্তৃকপক্ষ তাদের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান সঠিক এবং নির্ভুল দাবি করলেও যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ১৪ হাজার ৩৫৭ জন রোগী জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, একই সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছে যথাক্রমে ৯ হাজার ৮৭৯ জন, ৯ হাজার ২৯৩ জন, ৪ হাজার ৭৮৪ জন ও ৩ হাজার ৫৬৩ জন। এছাড়া কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৬ হাজার ৭৪৮ জন ও ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ খানপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৪ হাজার ৫৮৩ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। দেশের মাত্র এই ৭টি হাসপাতালে ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তির তথ্য মিলেছে ৫৩ হাজার ২০৭ জন।

বিআরটিএর প্রতিবেদনে দেশের একটি বিভাগীয় সদর হাসপাতালে ভর্তিকৃত সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যাও সারা দেশ থেকে তুলে আনতে পারেনি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ,সারা দেশে ৬৪টি জেলা সদর হাসপাতাল প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ জন, ৮ বিভাগে ১০টি বিভাগীয় বড় হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন হারে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হচ্ছে।

এসময় সারা দেশে ৮ হাজার নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতালের চিত্রও অনুরূপ বলে দাবি করেন মোজাম্মেল। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর ১৫ শতাংশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এমন আহত আড়াই থেকে তিন লাখ রোগীর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কী পরিমাণ মারা গেছে তার চিত্র বিআরটিএ’র রিপোর্টে আসেনি। ফলে বিআরটিএ’র রিপোর্টে হতাহতের সংখ্যা ও দুর্ঘটনার সংখ্যাতে যে বিভ্রান্তি রয়েছে তা স্পষ্টত ফুটে উঠেছে।

সভায় বক্তারা দাবি করেন, গত এক দশকে মোটর সাইকেলের সংখ্যা ১৫ লাখ থেকে ৪৫ লাখ থেকে উন্নীত হয়েছে, একই সময়ে ৩০ লাখের বেশি ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিক্সাসহ ছোট ছোট যানবাহন বেড়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেস বিহীন যানবাহনও দিগুণ হয়েছে। কৃষি শ্রমিকেরা বেশি লাভের আশায় ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে। এসব কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০১২ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ হাজার ৩১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। যা ২০১৫ সালে ২৪ হাজার ৯৫৪ জনে উন্নীত হয়। এবারের ২০২৩ সালের গ্লোবাল রোড সেইফটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আহতের সংখ্যা নিহতের প্রায় ৯ থেকে ১০ গুন। দেশের মাত্র ৭টি হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি চিত্র এহেন হতাহতের সাক্ষ্য দেয়।

সভায় বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্যকে আমলে নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে রিপোর্টটি দিয়েছে এটা বাংলাদেশের জন্য আলাদাভাবে করা হয়নি, যা সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর ও একটি বেসরকারি সংস্থা পর্যবেক্ষণে ২০১৬ সালের ১ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ৩৬০ জন নিহতের তথ্য পেয়েছে। তখন সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র ২ হাজার জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসরণ করে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই সড়ক দুর্ঘটনা কমে এসেছে। ২০১০ সালের তুলনায় মৃত্যুর হার কমেছে অন্তত ১০৮টি দেশে। প্রতিবেশি দেশ শ্রীলঙ্কা, বেলারুশ, ব্রুনাই দারুসসালাম, ডেনমার্ক, জাপান, লিথুয়ানিয়া, নরওয়ে, রাশিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভেনিজুয়েলার মত ১০টি দেশে মৃত্যুর হার অর্ধেকের বেশি কমিয়ে এনেছে। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে সড়ক নিরাপত্তায় বড় ধরনের অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার ডাটাবেজ সিস্টেম আধুনিকায়নের প্রকল্পও এতে সংযুক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, বিআরটিএ প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা সংগ্রহ করলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টের সমপরিমাণ হতাহত ও দুর্ঘটনার তথ্য উঠে আসবে। কিন্তু বিআরটিএ সেকেন্ডারি সোর্স ব্যবহারের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে পারছে না। ফলে দেশের মানুষের জীবন বাঁচাতে সরকার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

এ পরিস্থিতিতে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সরকারি উদ্যোগে বিআরটিএ মাধ্যমে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালুর দাবি জানান বক্তারা। একই সঙ্গে ছোট যানবাহন বন্ধ করে নিরাপদ সাশ্রয়ী ও স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানান তারা।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সড়ক নিরাপত্তা জোট শ্রোতা সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আব্দুল হক, বিশিষ্ট সাংবাদিক হারুন অর রশিদ, সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন প্রমুখ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন