জাতীয় ডেস্ক:
আটচল্লিশ ঘণ্টা পেরিয়ে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার এক যুগ পূর্ণ হলো আজ। এখনও জমা পড়েনি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন। কবে নাগাদ প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হবে, তা-ও বলতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন এই সাংবাদিক দম্পতি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এক যুগ পার হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিনও তদন্ত সংস্থা র্যাব প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এ জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
সাংবাদিকতা করতে গিয়েছিলেন জার্মানিতে। বিলাসবহুল জীবন নিয়ে পরিবারসহ থিতু হতে পারতেন সেখানেই। কিন্তু বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষায় মিলেমিশে বেড়ে উঠবে একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ–এমন স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরে আসেন সাগর-রুনি দম্পতি। পরিবারের সদস্যরা আজও তাদের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান। স্বাধীন দেশে প্রিয়জন হত্যার সুষ্ঠু বিচারের স্বপ্ন দেখেন।
কিন্তু হত্যাকাণ্ডের এত বছর পেরিয়ে গেলেও বোনের হত্যার বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেহেরুন রুমির ভাই নওশের আল রোমান। তিনি বলেন, ‘বিচারপ্রক্রিয়া বা তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে যত ধরনের নাটক বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের তরফ থেকে যত ধরনের মন্তব্য করা হয় তাতে আসলে হতাশাই বাড়ে। তথন মনে হয় কাদের কাছে বিচার চাচ্ছি।’
সাগর-রুনি একমাত্র ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ বলেন, ‘আমি চাই না কারো জীবনে এমন ঘটনা ঘটুক।’
হত্যাকাণ্ডের এত দিন পরও বিচারের দাবিতে আন্দোলনের মাঠে স্বজন-সহকর্মীরা। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এতে এক যুগেও সাগর-রুনি হত্যার কোনো কূল-কিনারা না হওয়ায় বক্তারা প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে।
মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন চাই এবং দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ করতে হবে।’
প্রধান বিচারপতিকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে যমুনা টিভির বিজনেস হেড সাজাজাদ আলম খান তপু বলেন, ‘আমাদের আশা-ভরসা-আশ্রয়স্থলে আপনার অংশগ্রহণের অনেক বেশি সুযোগ রয়েছে।’
বহুল-চাঞ্চল্যকর, ক্লুলেস হত্যার দ্রুত তদন্ত হয়েছে, বিচার হয়েছে। অথচ ১০৫ বার তদন্ত পিছিয়ে এক যুগ পেরিয়েও সাগর-রুনি হত্যার বিচারে আরও ৫০ বছর অপেক্ষা করার মতো কথা কেন আসবে–এমন প্রশ্ন গোটা জাতির।