হোম অন্যান্যসারাদেশ মণিরামপুরে স্কুল ও কলেজ পড়য়া ৩ মেয়ের নিরাপত্তার জন্য পাহারাদার নিযুক্ত

মণিরামপুরে স্কুল ও কলেজ পড়য়া ৩ মেয়ের নিরাপত্তার জন্য পাহারাদার নিযুক্ত

কর্তৃক
০ মন্তব্য 112 ভিউজ

মণিরামপুর যশোর প্রতিনিধি:

যশোরের মণিরামপুরে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ৩ মেয়ের নিরাপত্তার জন্য রাতে বাড়িতে পাহারাদার নিযুক্ত করেছেন শেখ মাহাবুর রহমান নামে এক কৃষক। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি উপজেলার শেখপাড়া রোহিতা গ্রামের।

জানা যায়, উপজেলা ১নং রোহিতা ইউনিয়নের শেখপাড়া রোহিতা গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ শেখের পুত্র শেখ মাহাবুর রহমান। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরের আপন ভাই ও ভাতিজাদের হামলার ভয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে তার। গত দুই মাস ধরে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশসহ স্থানীয় মাতবরদের দ্বারে-দ্বারে ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে তিনি এই পাহারাদার নিযুক্ত করেছেন।

শেখ মাহাবুরের অভিযোগ, ২৩ বছর আগে তিনি মায়ের কাছ থেকে তিন শতক জমি কেনেন। কিন্তু হঠাৎ মায়ের মৃত্যু হওয়ায় তিনি জমিটি নিজের নামে দলিল করাতে পারেননি। এরপর ছয় ভাই বোনের মধ্যে পাঁচজন মাহাবুরকে সেই জমি ছেড়ে দেন। কিন্তু তার সেজো ভাই মুজিবর রহমান (মুইজে) জমির দাবি ছাড়েননি। অবশেষে (মুজিবর) নিজের অংশ বুঝে নেন। এরপর মাহাবুর তার অংশে ইটের ঘর তোলেন। এক পর্যায়ে মুজিবর তার ছেলে মেহেদী হাসেনের নামে গোপনে মাহাবুরের বসতভিটার অংশ থেকে তিন শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। এই নিয়ে মুজিবর ও মাহাবুরের দ্বন্ধ। যার জের ধরে দুইমাস আগে সংঘর্ষে দুই পক্ষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই সময় মুজিবরের করা মামলায় মাহাবুর জেল খাটেন।

মাহাবুর বলেন, জেল থেকে আসার পর আমার পরিবারকে নানাধরনের হুমকি দিয়ে আসছে মুজিবর ও তার তিন ছেলে সোহাগ হোসেন, মেহেদী হাসান ও জাহিদ হাসান। আমি স্ত্রী সুফিয়া খাতুন এবং তিন মেয়েকে সোনিয়া (একাদশ শ্রেণি), মনিরা (৮ম) ও রিয়া (২য়) কে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। ভয়ে দিনে রাতে আমার মেয়েরা বাইরে বেরুতে পারে না। ঘরের জানালা দরজা ভাল না। রাতে ঘুমোতে পারিনা, প্রায় সারারাত জেগে থাকতে হয়। যে কোন সময় আমার মেয়েদের ওপর হামলা হতে পারে। এমন কি এসিড নিক্ষেপ করতে পারে ওরা। সেই ভয়ে মাসিক দেড় হাজার টাকা বেতনে মদন শেখ নামে একজনকে রাতে পাহারাদার নিযুক্ত করেছি। দেড় মাস ধরে সে ডিউটি করছে। যে দিন পাহারাদার আসে না সেই দিন সবাইকে নিয়ে জেগে থাকতে হয়।
বিষয়টি নিয়ে বহুবার থানায় এবং স্থানীয় মাতবরদের কাছে গিয়েছি। কেউ সমাধান করে দেয়নি। কয়দিন আগে থানা থেকে পুলিশ এসে সব জেনেশুনে স্থানীয় মাতবর শেখ রাসেদকে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তিনি আজ না কাল করে শুধু দিন দিচ্ছেন।

সরেজমিন রোববার রাতে গিয়ে মাহাবুরের বাড়িতে পাহাদারকে দায়িত্বরত অবস্থায় পাওয়া গেছে। পাহারাদার মদন শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মারামারির পর থেকে মাহাবুরের পরিবারের মধ্যে ভয় ঢুকেছে। তাই তারা আমাকে দেড়হাজার টাকা মাসিক চুক্তিতে রেখেছেন। আমি সন্ধ্যার পর আসি সকালে লোকজন ঘুম থেকে উঠলে চলে যাই।

অভিযুক্ত মুজিবর শেখ বলেন, জমি নিয়ে আমাদের বিরোধ। সেই বিরোধ নিয়ে আমার স্ত্রী ও ছেলে মেহেদীকে-মাহাবুর ও তার মেয়েরা মেরেছে। তাই নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। আমার ছেলেরা বাইরে কাজে গেছে। আমরা কাউকে কোন হুমকি দেইনি।

স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ রাসেদ হোসেন বলেন, মাহাবুর বাড়িতে পাহারাদার রেখেছে কিনা জানি না। আমরা আগামী মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টি নিয়ে গ্রামে বসব।

মণিরামপুর থানার এসআই খান আব্দুর রহমান বলেন, জমি নিয়ে মূলত মাহাবুর ও তার ভাইয়ের বিরোধ। জমির সমস্যা মিটলে সব সমাধান হয়ে যাবে। আমি সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা রাসেদকে সমাধানের জন্য দায়িত্ব দিয়েছি। সে যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটা আমাদের জানাতে বলেছি। মাহাবুরের বাড়িতে নৈশপ্রহরী রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই আব্দুর রহমান বলেন, ওটা মাহাবুরের মনের দুর্বলতা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন