অনলাইন ডেস্ক:
স্কুলের সভাপতি হওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এমনকি তিনি স্কুলে গিয়ে বর্তমান সভাপতিকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়েও তিনি বক্তব্য দেননি সংবাদকর্মীদের। পুলিশ বলছে, নির্যাতনের ঘটনা জানলেও তারা এখনও কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্যাতিত শিক্ষক নুরুল আমিন জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে চান। সম্প্রতি তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর ফোন করে ওই নিয়োগ কার্যক্রম বাতিলের নির্দেশ দেন। তিনি দাবি করেন সভাপতি হয়ে তিনি এই নিয়োগ সম্পন্ন করবেন। কথা না রাখায় গত ৩১ অক্টোবর অপহরণ করা হয় তাকে। এরপর তিনি ২ নভেম্বরের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচন বন্ধের জন্য নির্যাতন চালান। তাকে দিয়ে আবেদনপত্র লিখিয়ে নিয়ে সেই নির্বাচন বন্ধ করান। পরবর্তীতে ৯ নভেম্বর বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ আহ্বান করলে ক্ষিপ্ত হন মোস্তফা ফরিদ চৌধুরী।
তিনি আরও জানান, ৭ নভেম্বর ফোন করে নিজ বাড়িতে ডেকে পাঠান প্রধান শিক্ষককে। পরদিন সকালে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রেখে প্রধান শিক্ষককের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অভিভাবক সমাবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমার অণ্ডকোষ এবং মাথা, মুখে ব্যাপক আঘাত করেছে। আমাকে যখন ছেড়ে দেয়া হয় অণ্ডকোষের যন্ত্রণা থেকে লাঘব পেতে প্রকাশ্যে রাস্তায় লোকজনের সামনে প্রসাব করে দিই। তারপরও আমার ব্যথা কমেনি। পাশের একটা ফার্মেসি থেকে ব্যথার ওষুধ কিনে খাই। এরপর ফোন করে আমার স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে এসে তার সহায়তায় হাসপাতালে যাই। খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ফোন দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধা দেন। বলেন ভর্তি হলে তোকে খুন করব। মানুষ মারলে কিছুই হয় না। এরপর আমি ভয়ে বাড়ি ফিরে আসি এবং গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমি যাতে কাউকে কিছু না বলি সেজন্য আমাকে প্রতিদিনই হুমকি দেয়া হচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিক) কীভাবে জেনেছেন জানি না, এর দায়ও কিন্তু আমার ঘাড়ে আসবে। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
প্রধান শিক্ষক জানান, গত ৯ নভেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যান তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির হন এবং নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করেন। এ সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেনকে লাঞ্ছিত করে স্কুল থেকে বের করে দেন। এনিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা।
স্কুলের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেন বলেন, ‘অভিভাবক সমাবেশ বন্ধ করা হলেও আমি ৯ নভেম্বর স্কুলে যাই। খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান লোকজন নিয়ে স্কুলে আসে। এ সময় তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে লাঞ্ছিত করে এবং স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করে। সে সময় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ছিলেন। তিনি সবাইকে শুনিয়ে বলেন ‘এখন থেকে এই বিদ্যালয়ের সভাপতি আমি। আমার নির্দেশে সব কার্যক্রম চলবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন দপ্তরে এ বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। এ স্কুলটি একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল।’
এ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়েও বক্তব্য দেননি উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ চৌধুরী। তবে তিনি অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালান।
এদিকে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান জানান, নির্যাতনের ঘটনা জানলেও তারা এখনও কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অবশ্য যশোর উপশহর বিরামপুর এলাকার বাসিন্দা প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন এর আগে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন।