অনলাইন ডেস্ক:
সারাদেশের মধ্যে বাল্যবিয়েতে শীর্ষস্থানে রয়েছে পিরোজপুর আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ‘বর্ন টু বি অ্যা ব্রাইড, চাইল্ড ম্যারেজ: ট্রেন্ডস অ্যান্ড কজেস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সবচেয়ে বেশি বাল্য বিয়ে হয় পিরোজপুরে। এ জেলার বাল্যবিয়ের হার ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। দ্বিতীয়তে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এ জেলায় বাল্যবিয়ের হার ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ।
বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তার অভাবকে। এছাড়াও দারিদ্রতা, ‘ভালো পাত্রের সন্ধান’, লেখাপড়ায় অনীহার কারণে বাল্যবিয়ের চর্চা বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পলশা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসলেম উদ্দিন মনে করেন, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবেই জেলায় বাল্যবিয়ে বেশি হচ্ছে। তিনি বলেন, বেশিরভাগ অভিভাবকই তাদের কন্যাসন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। যে কারণে দ্রুত বিয়ে দেয়ার তাগিদ অনুভব করেন মন থেকে।
তিনি আরও বলেন, জেলার উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর চিত্র দেখলেই ধারণা পাওয়া যাবে বাল্যবিয়ের। এসব বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে যে পরিমাণ ছাত্রী ভর্তি হয় এসএসসিতে পরীক্ষা দেয় হাতেগোনা। তার আগেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাজনিন ফাতেমা জিনিয়া বলেন, মেয়ের পরিবারের লোকদের বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে ধারণা নেই। তাই নামমাত্র টাকায় নগদ দেনমহর ধার্য করার কারণে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু ইউনিয়নই নয়, পৌর এলাকাতেও বাল্যবিয়ের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। প্রত্যন্ত গ্রামের পরিবারগুলো অল্পবয়সী মেয়েদের শহরে বিয়ে দিচ্ছে। শুধু শহরমুখী হওয়ার জন্য। বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা বাল্যবিয়েতে ঝুঁকছেন।
তিনি আরও বলেন, বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ার জন্য নিজেরাই দায়ী। প্রত্যেক পরিবারকে সচেতন হতে হবে। জনসচেতনতা বাড়ানো গেলে বাল্যবিয়ে কমবে। এর পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসা. সাহিদা আকতার জানান, জেলায় গ্রাম বা শহর সবখানেই বাল্য বিয়ে হচ্ছে। যারা প্রবাসে যান ও প্রবাস থেকে ফেরেন তারা কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে করেন। এছাড়াও জেলায় শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে যারা শ্রমিকের কাজ করে এমন ছেলেরাও কম বয়সে বিয়ে করছে। সে ক্ষেত্রেও মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে।
ব্র্যাকের গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাল্যবিয়ের চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গবেষণা প্রতিবেদনে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা একটু-আধটু হেরফের হতে পারে। তবে বাল্যবিয়ে যে হচ্ছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বা হারের তথ্য নেই জেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক অধিদফতরসহ কোনো দফতরেই। তবে অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম জানান, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। জনসাধারণকে সচেতন করতে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাল্যবিয়ের কুফল নিয়ে আলোচনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইউনিসেফসহ জেলা প্রশাসন একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এতে আগের চেয়ে বাল্যবিয়ের হার কমেছে। জনসচেতনতার পাশাপাশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, বরসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।