দ্রুত সময়ের মধ্যে যানবাহন চলাচলে গতির নীতিমালা আসছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী। তিনি বলেছেন, ‘গাড়ির গতি কমানো গেলে দুর্ঘটনা কমে যাবে। এজন্য আমরা একটি গাইডলাইন তৈরির কাজ করছি। আপনারা দ্রুতই একটি গতির নীতিমালা পাবেন।’
আজ বুধবার (৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আয়োজিত ‘সড়ক ও যানবাহনের প্রকারভেদে গতি নির্ধারণ, ব্যবস্থাপনা, মনিটরিং এবং বাস্তবায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সচিব এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘আমরা একটি প্রস্তাবনা করেছিলাম যেখানে শহরের মধ্যে যানবাহনের গতি ৩০ কিলোমিটার (প্রতি ঘণ্টায়) করা প্রয়োজন। এটি করার পর মানববন্ধন শুরু হয়ে গেছে এই গতিকে কীভাবে বাড়ানো হবে। আমি আর এটি নিয়ে কিছু বলছি না। একটু আগেই প্রেজেন্টেশনে দেখা গেল যে, শহরের মধ্যে গতি ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার হওয়া উচিত। যখনই একটি যানবাহনের জন্য আমাদের শহরে বলা হলো গতি ৩০ কিলোমিটার করা হবে, তারপরের দিনই মানববন্ধন করে বলা হলো, এই গতিসীমা বাড়াতে হবে। এটিই হচ্ছে আমাদের বর্তমান বাস্তব অবস্থা।’
সচিব আরও বলেন, ‘হাইওয়েগুলোতে গতিসীমা ৮০ করা হয়েছে। আমার কাছে কেউ একজন ফোন করে দাবি করেছেন, হাইওয়েতে ৮০ কিলোমিটার বেগে চালানো যায়, এই গতিসীমা ১০০ করে দিন। এগুলোই হচ্ছে আমাদের বর্তমান দাবি। কিন্তু আমি এসবের পক্ষে নই। যেখানে গতি বাড়বে সেখানে দুর্ঘটনা বাড়বে। তাই গতিসীমা কমানো উচিত। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এডিসি সোহেল রানা বলেন, ‘আইন প্রয়োগ করাটাই আমাদের কাছে মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু ঢাকা শহরের যানজট কমাতেই আমাদের ৯৯ শতাংশ সময় ব্যয় করতে হয়। ফলে আমরা অন্য বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে পারি না। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে সড়ক কম, গাড়ি বেশি।’
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিকী বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন দুর্ঘটনার তথ্য দেয়। আসলে আমাদের কাছে প্রোপার ডাটা নেই। ফলে আমরা কাজ করতে পারি না। দুর্ঘটনার প্রোপার ডাটা তৈরি করা উচিত।’
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থা বুঝে আমাদের যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের কোনো এক সড়কে গতিসীমা দিয়ে রাখলাম ৮০ কিলোমিটার, কিন্তু বন্যার সময় সেখানে সে গতিতে চলা সম্ভব না। সেক্ষেত্রে সেখানে ভেরিয়েবল সাইনবোর্ড থাকা জরুরি।’
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, ‘আমরা যেগুলো করতে পারি, যেগুলো করা সম্ভব, সেগুলো করতে হবে। হেলমেটের ব্যবহার, অটোমেটিক টোলের ব্যবস্থা করা, সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো কেন আমরা করতে পারছি না? এই বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। স্কুল পর্যায় থেকে আমাদের সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আর কোনো গতিসীমা নির্ধারণ বা নিয়মনীতি করলে তা যেন চালকরা জানতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শ্যামল কুমার মুখার্জি, বিআরটিএর ঢাকা বিভাগের পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ, বিআরটিসির জেনারেল ম্যানেজার (হিসাব) আমজাদ হোসেন, নিসচার মহাসচিব লিটন এরশাদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন প্রমুখ।