জাতীয় ডেস্ক:
নিদিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি বরিশালের ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগীদের জন্য নির্মিত বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ কাজ। এমনকি প্রায় আট মাস হলো শেষ হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদও। তাহলে বিশেষায়িত হাসপাতালটির নির্মাণ সম্পন্ন হবে কবে, তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৬০ শয্যার বরিশাল ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের বিশেষায়িত হাসপাতালটির নির্মাণের খবর আশা জাগিয়েছিলো দক্ষিণাঞ্চলে মানুষের মাঝে। তবে শর্ত অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হয়নি নির্মাণকাজ।
ঠিকাদার জানান, তিন একর জমিতে ১৭ তলার ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও বরাদ্দ না পাওয়াসহ নানা সীমাবদ্ধতায় চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করতে পারেননি তারা।
মেসার্স খান বিল্ডার্সের ম্যানেজার রিপন তালুকদার বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় তা হয়নি।
চুক্তি অনুযায়ী, কাজের অর্ধেক শেষ করেও এখন পর্যন্ত আমরা বিল পেয়েছি মাত্র ২৫ শতাংশের। সরকারের কাছে এখনো ২০ কোটি টাকা পাব। বিল না পেলে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তার পরও কমসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে এভাবে আর কতদিন চালিয়ে নেয়া যাবে, তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে বছরে অন্তত তিন লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তাদের বড় একটি অংশ চিকিৎসার বাইরে থেকে যায় অর্থের অভাবে। বছরে এ রোগে মারা যায় এক লাখেরও বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে বড় একটি অংশ বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের। তাই এ অঞ্চলের চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজ ও যুগোপযোগী করে তুলতে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি সচেতন মহলের।
বরিশাল জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহবায়ক রফিকুল আলম বলেন, এ অঞ্চলের চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজ ও যুগোপযোগী করে তুলতে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। এটা থমকে গেলে আমাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে।
গণপূর্ত বিভাগ জানায়, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধে দেরির কারণেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ধীরগতি। প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
বরিশাল গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম বলেন, নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়েনি। তবে সরকারি প্রকল্পটি সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ঠিকাদার এ পর্যন্ত যে কাজ করেছে তার বিল এখনো পরিশোধ করা যায়নি। এখনো তারা ১৬ কোটি টাকা পাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হতে এখনো দুই বছর সময় লাগবে।
তাই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই নতুন করে দুই বছর সময় বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন হয়নি। তবে শিগগিরই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধ করাও সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দেশের বিভিন্ন বিভাগে আটটি সমন্বিত বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এর মধ্যে বরিশাল একটি। হাসপাতালটির ছয় তলা পর্যন্ত ১০০ শয্যার ইউনিট থাকবে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য। বাকিগুলোতে কিডনি, হৃদরোগসহ অন্যান্য বিভাগ থাকবে।