বাণিজ্য ডেস্ক:
এসএমএসের মাধ্যমে ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও চালের দাম বাড়ানোর চক্র ধরতে মাঠে নেমেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, যারা এভাবে বাজার অস্থির করছে তারে ধরা হবে।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে বরিশালের ফরিয়াপট্টি, চকবাজার এলাকার পাইকারি বাজার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এসএমএসের মাধ্যমে ডিম, ব্রয়লার মুরগির মতো চালের বাজারও অস্থির করা হয়। এটা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি। অর্থাৎ এক জোট হওয়া কিংবা একজন দাম বাড়িয়েছে বলে বাকিরাও বাড়িয়েছে- এগুলোকে বন্ধ করা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক ফকির মুনাওয়ার, বরিশালের এডিসি জেনারেল মনদীপ ঘরাই ও ভোক্তা অধিকারের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মাঝে মাঝে সুযোগ নিয়ে ১৭ কোটি ভোক্তাকে প্রতারিত করছে ক্ষুদ্র কয়েকটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। এর আগে আলু, ব্রয়লার মুরগি, ডিম নিয়ে যা করছে; আজ চাল, কাল পেঁয়াজ নিয়েও তা করা হচ্ছে, আর এদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে আমাদের।’
তিনি বলেন, ‘মোকামে চালের দাম বাড়ানোর পেছনে একটি চক্র সারাদেশে ধানের দাম বেড়েছে বলে প্রচার করেছে। ধানের দাম যদি বেড়েও থাকে সেই চালটা তো দুই মাস পরে অর্থাৎ বৈশাখ মাসে বাজারে আসবে। কিন্তু এখন ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে চার টাকা বেশি দামে যে চালটা পাওয়া যাচ্ছে তার ধানের সোর্স তো আগের সোর্সের সঙ্গে একই। অর্থাৎ বাজারের বর্তমান চালের ধানটা আগে কিনে মাড়াই করে বিভিন্ন জায়গায় স্টক করে রাখা। বর্তমানে কস্টিংয়ের কোনো ডিফারেন্সও হওয়ার কথা না। কারণ, ট্রাক ভাড়া, দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন বাড়েনি। তাহলে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে ১৫ দিনের ব্যবধানে আগে ধানের চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া অযৌক্তিক। আর অযৌক্তিক বিষয়ের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি।’
ভোক্তা অধিকারের ডিজি আরও বলেন, ‘ঠিক ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে একই মোকামের একই ভাউচারে একই চাল ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা কম-বেশি হচ্ছে। অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষে যে চালটা এসেছে এবং জানুয়ারির ১০-১২ তারিখে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে সেখানে ৪ টাকার ডিফারেন্স ফরিদপুর ও কুষ্টিয়ার আড়ত থেকেই হচ্ছে। বরিশালে তেমন কোনো ব্যত্যয় পাওয়া যায়নি। তারা যে দামে চাল কিনছে আর তার ওপর সামান্য লাভ করেই বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে এখানে হাজার হাজার চালের বস্তা রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারা যেন তদন্ত করে দেখে আগের কম দামের কেনা চাল স্টক করে বাড়তি দামে বিক্রি করছে কিনা। কারণ, স্টকের চাল যদি বাড়তি দামে বিক্রি হয়, সেটাও একটি বড় ঘাপলা।’
তিনি আরও বলেন, বরিশাল বা যেসব জায়গায় পাইকারি ও খুচরা চাল বিক্রি হচ্ছে সেখান থেকে তথ্য নিচ্ছি আমরা। আর এখান থেকে তথ্য নিয়ে যে সোর্স থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সেখানে তদন্ত করবো। ব্যত্যয় ঘটলে প্রয়োজনে সিলগালা করে দেব, আইনের আওতায় নেব।’
আসন্ন রমজান উপলক্ষে ডাল, চিনি, তেলসহ রমজানের পণ্য নিয়ে যাতে কারসাজি না করতে পারে সেজন্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বরিশালের পাইকার মার্কেটে পাওয়া খোলা ভোজ্যতেলের অপরিষ্কার ড্রাম দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
ডিজি বলেন, ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে লেভেলহীন ড্রামে করে পাম তেল, সুপার পাম এবং সয়াবিন পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দামেও বড় পার্থক্য রয়েছে। তবে কেউ যদি পাম নিয়ে সয়াবিনের নামে ও দামে খুচরা বাজারে বিক্রি করে সাধারণ মানুষ তা জানবে না। এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
বাজার পরিদর্শন শেষে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের আয়োজনে চাল, ভোজ্যতেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি।