অনলাইন ডেস্ক:
‘যত বারই আসি, বার বার আসতে মন চায়। যেটা বলে বোঝানো যাবে না। এখন বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ, স্কুল বন্ধ; তাই বিজয় দিবসের ছুটিতে বেড়াতে এসেছি। কক্সবাজার মানেই হচ্ছে অন্যরকম ভালো লাগা। কংক্রিটের শহর ছেড়ে সমুদ্রের নোনাজলে গা ভেজানো বেশ স্বস্তির। আর সমুদ্রসৈকতে এলে এমনিতেই ভালো লাগে।’ বিজয় দিবসের ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটক মিথিলা জাহান এভাবেই বলছিলেন তার অনুভূতির কথা।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে মেতেছিলেন খুলনা থেকে আসা ব্যাংকার মুরাদ হোসেন। একজন কিংবা দুজন নন; একই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন পরিবারের ৯ সদস্যকে। হারিয়ে যান আনন্দ-উল্লাসে।
মুরাদ হোসেন বলেন, ‘অক্টোবর মাস থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে বার বার তারিখ পরিবর্তন করেও আসা হয়নি। এখন বিজয় দিবসের ছুটি পেয়েছি তাই আমার, ছোট ভাইয়ের ও মামার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। খুবই ভালো লাগছে, আনন্দে যাচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত।’
একই পয়েন্টের সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘোড়ার পিঠে চড়ছেন দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী রাসেল আহমেদ। তার সঙ্গে রয়েছে ৬ বছরের শিশু কন্যা রোকেয়া। তারাও ব্যস্ত ছবি তোলা নিয়ে। রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বাচ্চা নিয়ে ছুটির দিনে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা একটা শখ ছিল। এই শখটা পূরণ হলো। কারণ প্রবাসে থাকি, সবসময় আসা হয় না। এখন কক্সবাজার বেড়াতে এসে বালিয়াড়িতে বাচ্চাকে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ছি আর ছবি তুলছি। খুবই মজা পাচ্ছি।’
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসের ছুটিতে সৈকত শহর কক্সবাজারে ভিড় করেছে লাখো পর্যটক। সাগরতীরে সবাই মেতেছেন বিজয়ের উল্লাসে। তবে ভোগান্তি কিংবা হয়রানির শিকারও কম হচ্ছেন না ভ্রমণপিপাসুরা। আর নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে সতর্ক অবস্থানে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
ভ্রমণপিপাসুরা একটু সময় পেলেই কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে সমুদ্রের নোনাজলে গা ভেজাতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে ছুটে যান। হাল্কা শীতে সমুদ্রের পাড়ে বসে মৃদু রোদ উপভোগ করাটা বেশ স্বস্তির। তাই তো সারা বছরের তুলনায় শীত মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের পদচারণা বেশি থাকে। যদিও এবছর হরতাল-অবরোধের কারণে মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। তবে বিজয় দিবসের ছুটিতে কক্সবাজারে ভিড় করেছেন লাখো মানুষ। সব বয়সের মানুষই মেতেছেন সাগরতীরে।
রাজশাহী থেকে বেড়াতে আসা নুসরাত জাহান বলেন, ‘মাছের অ্যাকুরিয়াম দেখেছি, শুটকি মহাল দেখেছি। এখন সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে আছি, এখানে গোসল কবর। আর বাকি সময়গুলোতে মেরিন ড্রাইভ, ইনানী ও পাতুয়ার টেক ঘুরতে যাব। এভাবেই পরিকল্পনা করে এসেছি।’
আরেক পর্যটক সিয়াম আহমেদ বলেন, ‘সমুদ্রের নোনাজলে বেশ ভালো লাগছে। একবার গোসল করে বালিয়াড়িতে উঠে আসি, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার গোসলে নেমে পড়ি। এভাবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গোসলে মেতে ছিলাম। সমুদ্রের নোনাজল থেকে উঠতেই মন চায় না। মনে হয়, সমুদ্রে গোসল করে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে লাখো পর্যটকের সমাগমে হয়রানি কিংবা ভোগান্তিও কম পোহাচ্ছেন না পর্যটকরা। তাদের অভিযোগ, হোটেল-রেস্তোরাঁ বা যানবাহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
ইব্রাহীম কাদের নামের এক পর্যটক বলেন, ‘শনিবার সকালে কক্সবাজার এসেছি। কিন্তু হোটেল রুম ভাড়া নিয়ে বিপদে পড়ে যাই। যে রুম গতবছর ৪ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিলাম, এবার তা ১০ হাজার টাকা ভাড়া চায় হোটেল কর্তৃপক্ষ। বলে, থাকলে থাকেন; না হয় চলে যান, এখন পর্যটকের অভাব নেই। আপনি রুম না নিলে পর্যটকের অভাব হবে না। পরিশেষে ৭ হাজার টাকায় রুম ভাড়া নিতে বাধ্য হয়েছি।’
আরেক পর্যটক রুস্তম আলী বলেন, ‘হোটেল থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ বা যানবাহন সব জায়গায় বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। দুই দিনের জন্য ২০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এখন এই টাকা দিয়ে হচ্ছে না তাই বাধ্য হয়ে বিকাশের মাধ্যমে পরিবারের কাছ থেকে আরও ১০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছি।’
বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগমে বেশ তৎপরতা দেখা যায় ট্যুরিস্ট পুলিশের। তাদের সৈকতের ৩টি পয়েন্টে হাঁটাহাঁটি করতে এবং পর্যটকের সমস্যার কথা শুনতে দেখা যায়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের উপপরিদর্শক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, বিজয় দিবসের ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম হয়েছে কক্সবাজার সৈকতে। তাই সার্বিক টহলের পাশাপাশি নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে, পর্যটকরা কক্সবাজারে বেড়াতে এসে অনেক পর্যটক বাচ্চা কিংবা মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলছে। যা দ্রুত উদ্ধার করে পর্যটকদের কাছে হস্তান্তর করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পাশাপাশি পর্যটকদের হয়রানির কোন অভিযোগ পেলে তা দ্রুত নিরসন করা হচ্ছে। এজন্য জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। যিনি সার্বক্ষণিক সৈকত এলাকায় রয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তিনি।
এদিকে লাখো পর্যটকের সমাগমে চাঙ্গাভাব ফিরেছে সৈকতপাড়ের সব ব্যবসায়। আর ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট এখন পর্যটকে ঠাসা বলে জানিয়েছে হোটেল মালিক সমিতি।