মরণঘাতী করোনাভাইরাস। গোটা পৃথিবী কে স্তব্ধ করে দিয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় মানুষের জীবন এখন আর নিরাপদ নয়। ইতালি স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর মিছিল দেখছে পৃথিবীর মানুষ। সুখের অন্বেষণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ পাড়ি জমাই ইউরোপ-আমেরিকায়। সেক্ষেত্রে বাঙালিরাও পিছিয়ে নেই।
লক্ষ্য লক্ষ্য বাংলাদেশী মানুষ ইউরোপ-আমেরিকায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ভাবে অনেক আগে থেকেই বসতি শুরু করে। গত কয়েক দিনের খবরে দেখা যায় এ দুটি দেশে অসংখ্য বাংলাদেশি প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাস এর সংক্রমণে। এই প্রবাসীরা যদি দেশে থাকত হয়তোবা তাদের জীবন বেঁচে যেতে পারত। কারণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে মৃত্যুর হার খুবই কম।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ে রয়েছে নানা কথা। হয়তোবা আবহাওয়া জনিত কারণ ও উপমহাদেশের সরকারগুলোর কঠোর পদক্ষেপের কারণে মানুষের মৃত্যুর হার উন্নত বিশ্বের তুলনায় অনেক কম। করোনা ভাইরাসের কারণে এদেশের সাধারণ মানুষ কিছু নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হয়েছে। যেমন লকডাউন কোয়ারেন্টাইন আইসোলেশন ইত্যাদি। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
একজন সংবাদকর্মী হিসাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিবিড় ভাবে দেখার চেষ্টা করছি। সরকারের সিদ্ধান্ত গুলো সাধারণ মানুষ মানতে চায় না। কিন্তু সরকারের প্রশাসন যন্ত্র খুব ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো সরকারের প্রশাসনযন্ত্রের কঠোর রূপ আবার কখনো কখনো মানবিক গ্রুপ জাতির সামনে ফুটে উঠেছে। সরকারের পুলিশ বাহিনী নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে ঘরমুখো করতে পুলিশকে কখনো কখনো কঠোর হতে দেখছি। আবার অভুক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। করোনা সংক্রমণে মৃত্যু ব্যক্তির লাশ দাফন করতে যখন তার আপনজনেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখন পুলিশি সেই লাশ কাঁধে করে জানাজা পড়ে দাফন করতেও দেখেছে এদেশের মানুষ।
এক পুলিশ অফিসারের লাশ দাফনের আবেগঘন স্ট্যাটাস কোটি কোটি মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। অভুক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে ছুটে চলেছেন আরেক পুলিশ কর্মকর্তা। অঘোষিত লকডাউন এর কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন এখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। পরিস্থিতি বুঝতে পেরেই সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান নিজ উদ্যোগেই পাঁচ শতাধিক নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল তিনিও নিজ উদ্যোগে রাতের অন্ধকারে অসহায় মানুষের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন।
একশ্রেণীর মানুষ প্রশাসনের ইতিবাচক ভূমিকা ও বাঁকা চোখে দেখে। ধর্মান্ধ একাত্তরের পরাজিত শক্তির উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে শুনি মুজিব বর্ষ ঘটা করে পালন করার কারণেই দেশে নাকি করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণ! তাহলে ইউরোপ-আমেরিকায় তো মুজিব বর্ষ পালিত হচ্ছে না সেখানে কেন এই মৃত্যুর মিছিল ? তার কোন উত্তর নেই। এরা ভালো কাজটাও ভালোভাবে দেখতে জানে না।
রাতের অন্ধকারে অভুক্ত মানুষের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়াকে কেউ কেউ এক খলিফার সাথে তুলনা করেছেন। তবে দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যে যার অবস্থান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনী পুলিশ র্যাব ও সিভিল প্রশাসন সমন্বিতভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে । ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন।
এবং তিনি হুশিয়ারি করে বলেছেন এই দুঃসময়ে কেউ ত্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেললে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। অঘোষিত লকডাউন এর কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের ও দিনমজুর শ্রেণীর লোকজন রয়েছে অর্ধাহারে-অনাহারে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিত্তবান লোকজনও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে ১৬ কোটি মানুষের এই বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের সব চাওয়া পাওয়া পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু দরিদ্র মানুষের প্রতি শেখ হাসিনার যে মমত্ববোধ রয়েছে, সেদিনের ভিডিও কনফারেন্সে তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ফুটে উঠেছে। কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও এই দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথেষ্ট আন্তরিক বলে কয়েকদিনের কার্যক্রমে ফুটে উঠেছে।
সরকারের ত্রাণ তৎপরতা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। অতীতের বিভিন্ন সময় দেখেছি ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে দুর্নীতি অনিয়ম। দেশের ১৬ কোটি মানুষ সরকারের যে মানবিক প্রশাসনের চেহারা দেখেছে সেটা যেন সমুন্নত থাকে।
সর্বশেষ পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে শেষ করতে চাই। ২০১৩ ও ১৪ সালে সাতক্ষীরায় যে তান্ডব চলেছিল পুলিশ কঠোর ভূমিকা নেয়ার কারণেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জামাত-শিবিরের নাশকতাকে পুজো করে কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বেনিফিশিয়ারি হয়ে ছিলেন। মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের সাতক্ষীরা পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে বলে খুব কাছ থেকে দেখতে পায় ।
লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে পুলিশ ভালো মুখ দিয়ে সাধারণ মানুষকে ঘরমুখো করার চেষ্টাও করেছে। আবার কয়েকদিন পর দেখা গেল যেমন ছিল তেমন রয়েছে। কাল থেকে দেখা গেল পুলিশ সেনাবাহিনী মানুষকে ঘরে ফেরাতে যথেষ্ট কঠোর হয়েছে। এই মহামারী প্রতিরোধে পুলিশকে একটু কঠোর হওয়ার প্রয়োজনও ছিল।
কিন্তু চলন্ত মানুষকে থামানোর কি প্রয়োজন ছিল ? শহর ও জেলাজুড়ে হাট-বাজারের আড্ডা খানা ছত্রভঙ্গ করার খুবই প্রয়োজন ছিল। শহরে একজন পথচারীর সাথে কথা হচ্ছিল। পুলিশ লাঠিপেটা ও করছে আবার মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। ভাই পেটে খেলে পিঠে সয়। আরেক জন বলল পুলিশ হলো এই সরকারের মেরুদন্ড। তাই এই মহাদুর্যোগে সরকারকে রক্ষাকরাও পুলিশের দায়িত্ব। সে কারণেই পুলিশ খাদ্য সামগ্রী নিয়ে হাজির হচ্ছে অভুক্ত মানুষের দুয়ারে।
লেখক : সম্পাদক,দৈনিক সংকল্প