মণিরামপুর ( যশোর) প্রতিনিধি :
আবারও দলীয় নেতা-কর্মীদের সমলোচনার মুখে পড়েছেন মুহাম্মদ মুছা। দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিশেষ অতিথি হয়ে তিনি শনিবার মণিরামপুর চালপট্টি বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংগঠনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তার এই অনুষ্ঠানের যোগদান নিয়েই নিজের অনুসারীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় চলছে।
এ অনুষ্ঠানে থানা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেন সভাপতিত্ব করেন। দলের যে সকল নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন ভাবে নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাড. মোঃ সাবেরুল হক সাবু এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন। মণিরামপুর বিএনপির প্রবীন নেতা মুহাম্মাদ মুছা এ অনুষ্ঠানের যোগদান করায় তাকে দলের নেতা-কর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে মণিরামপুর এখন বিএনপির মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে চলেছে। থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে ২০০৩ সালে মুহাম্মাদ মুছাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বিএনপির সাংগঠনিক একক ক্ষমতা চলে যায় বর্তমান সভাপতি এ্যাড. শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেনের নিয়ন্ত্রনে। সেই ২০০৩ সাল থেকে বিগত সতেরটি বছরে মুহাম্মাদ মুছাকে অতিথি হিসেবে চালপট্টির বিএনপির ও দলীয় কার্যালয়ে সাংগঠনিক অনুষ্ঠানে কখনোই আমন্ত্রন করা হয়নি।
এসব ঘটনা নিয়ে তার অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরী হয়। একপর্যায়ে গত বছর দু’আগে থেকে পৌর শহরের দক্ষিণ বাসষ্ট্যান্ডে পৃথক একটি বিএনপির দলীয় কার্যালয় করা হয়। মুহাম্মাদ মুছার নেতৃত্বে এ কার্যালয় থেকে সংগঠনের বিভিন্ন সময় কার্যক্রম সম্পাদন করে চলেছেন। এক্ষেত্রে বিএনপির মুহাম্মাদ মুছার নেতৃত্বে শক্ত একটি বলয় তৈরী হয়। সম্প্রতি পৃথক দুটি গ্রুপের মধ্যে হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটেছে একাধিক বার।
দলের গ্রুপিং এর এ অবস্থার মধ্যে যুবদল বাদে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দলের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গঠিত এ কমিটি গুলো থেকে মুহাম্মাদ মুছা নতুন করে সাংগঠনিক শক্তির সঞ্চর করে। শনিবার সিনিয়র নেতা মুহাম্মাদ মুছা বিশেষ অতিথি হিসেবে শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেনের অনুষ্ঠানে যোগদান করায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে।
মণিরামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ডা. আলতাফ হোসেন তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, মানুষ বুড়ো হলে বুদ্ধি-বিবেক লোপ পায়। সে অবস্থা থেকে মুহাম্মাদ মুছার এমন ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনার মাশুল নিয়েই তাকে রাজনীতির মাঠ ছেড়ে ঘরে বসে কাটাতে হবে। মুহাম্মাদ মুছার একান্ত রাজনৈতিক সহচর শামসুজ্জামান শান্ত জানিয়েছেন, মুছা ভাই হঠাৎ করে শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেনের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনটা আবার বিতর্কে চলে এসেছে। এক প্রতিক্রিয়ায় শান্ত জানায়, শহীদ ইকবালের রাজনীতিতে যখনি ভাটা শুরু হয় তখনই মুছা সাহেবকে নিয়ে এ দাবার চালটা দেওয়ায় স্বাভাবিক। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মুহাম্মাদ মুছা।
পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সন্তোষ কুমার স্বর জানান, বিএনপির এখন ক্রাইসেচ প্রিয়ড চলছে। তাই সকলের এক মঞ্চে আশাটাই বিএনপির জন্য ভালো। এ বিবেচনা থেকেই শহীদ ইকবালের মঞ্চে মুছা ভাই অতিথি হিসেবে এসেছেন।
ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান জিএম মিজানুর রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, অদূরদর্শী ব্যক্তির সাথে রাজনীতি করলে এভাবেই হুচোট খেতে হবে। মুছা ভাই যে কাজটি করেছেন তা রাজনৈতিক ভাবে চরম ক্ষতি হয়েছে আমাদের।
সাবেক ছাত্রনেতা শাহিনুর রহমান পান্না তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, মুছা ভাই হঠাৎ ভুল পথে পা দিয়েছে। ফলে এর মাশুল তাকে দিতে হবে। সাবেক ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর হোসেন তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, মুছা ভাই তার লোকজনের সাথে পরামর্শ না করেই সেখানে যাওয়াটা তার জন্য চরম ভুল। সামনের দিনগুলোতে তার এই ভুলের জন্য নিজেই শিক্ষা নিতে পারবেন।