নিজস্ব প্রতিনিধি:
সম্প্রতি সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদের পদটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেট স্থগিত করে হাইকোর্ট। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে এক আদেশে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছে চেম্বার আদালত। ফলে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কাজী ফিরোজ হাসানের মেয়র পদে থাকার বাধা থাকলো না।
গত ২৩ নভেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর–১ শাখার উপসচিব আব্দুর রহমানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের পদটি শূন্য ঘোষণা করেন। একই সাথে অন্য এক প্রজ্ঞাপনে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে কাজী ফিরোজ হাসান কে দায়িত্ব দেন।
এদিকে গত সোমবার (১১ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়ের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে তাজকিন আহমেদের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ গেজেট স্থগিত করেন।
সিনিয়র সহকারী সচিব ও সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন জানান, সম্প্রতি সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদের পদটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে বরখাস্থ হওয়া মেয়র তাজকিন আহমেদ গেজেট চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট বিভাগে রিট মামলা দায়ের করেন। হাইকোর্ট উক্ত গেজেট ছয় মাসের জন্য স্টে করেন। ততপ্রেক্ষিতে, সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান আপীল বিভাগের চেম্বার আদালতে সিএমপি ফাইল করেন। উক্ত সিএমপি এর আজ আপীল বিভাগের ফুল বেঞ্চে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, তাজকিন আহমেদের করা সিভিল মিস পিটিশন ১১১৯/২০২৩ মামলায় হাইকোর্ট প্রদত্ত আদেশ আপীল বিভাগের ফুলবেঞ্চ স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। আজ আপীল বিভাগের চারজন বিচারপতি সমন্বয় গঠিত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি মো: এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী এবং বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এই আদেশ দেন। যার, কাজী ফিরোজ হাসানের মেয়র পদে থাকার বাধা থাকলো না।
উল্লেখ্য: স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া এবং বিধিবহির্ভূতভাবে পৌরসভার ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভান্ডার সংলগ্ন জমিতে মার্কেট নির্মাণের দরপত্র আহ্বানসহ ১০ দফা অভিযোগ উল্লেখ করে পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদের বিরুদ্ধে গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন ১২ কাউন্সিলর।
গত ৩ সেপ্টেম্বর বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পালকে নির্দেশ দেন ডিসি। নির্দেশ মোতাবেক তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পাল। এরপর গত ২৫ সেপ্টেম্বর পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদকে ‘অনাস্থা প্রস্তাব’-এর পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় কার্যধারা কেন নেওয়া হবে না মর্মে এই চিঠি পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু তাজকিন আহমেদ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের চিঠির জবাব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না দেওয়ায় কাউন্সিলর ফিরোজ হাসানকে (ভারপ্রাপ্ত মেয়র) অনাস্থা প্রস্তাব সম্পর্কিত সভা ডাকার আহ্বান জানানো হয়।
পরে গত ১৮ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে সাতক্ষীরা পৌরসভা পরিষদ কক্ষে সভা ডাকেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান। সেই সভায় ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১১ জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত ১১ জনই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। তবে ওই সভায় পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না।
এরপর গত ২৩ নভেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর–১ শাখার উপসচিব আব্দুর রহমানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।