জাতীয় :
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রাজধানীর যানজট এবং জনজট নিরসনে সাবওয়ে নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই।’
রাজধানীর একটি হোটেলে আজ মঙ্গলবার সকালে ‘ঢাকা শহরে সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পের খসড়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে মতামত গ্রহণের জন্য অনুষ্ঠেয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সেমিনারে উপস্থিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র দ্বয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা এখন দূষণের নগরী। নগরীকে বাসযোগ্য করার জন্য নতুন উদ্যমে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
২৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা সাবওয়ে নেটওয়ার্ক-এর জন্য স্পেনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টিপসা প্রাথমিকভাবে ১১টি রুট এলাইনমেন্ট প্রস্তাব করে। এই ১১টি রুটের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চারটি রুট ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। রুট চারটি হলো- ২৪টি স্টেশন বিশিষ্ট ৩৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঝিলমিল থেকে টঙ্গি জংশন রুট যেখানে প্রতি কিলোমিটারে সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় দুই হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। ১৪টি স্টেশন বিশিষ্ট ২২ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ গাবতলী থেকে ভোলাব ইউনিয়ন রুট যেখানে প্রতি কিলোমিটারে সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় দুই হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। ১৫টি স্টেশন বিশিষ্ট ২৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ কেরাণীগঞ্জ থেকে সোনাপুর ইউনিয়ন রুট যেখানে প্রতি কিলোমিটারে সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় দুই হাজার ২১৭ কোটি টাকা এবং ৩২টি স্টেশন বিশিষ্ট ৪৫ দশমিক ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ রুট যেখানে প্রতি কিলোমিটারে সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
সাবওয়ের জন্য নির্মিত টানেল ভূপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ২৫ হতে ৭০ মিটার নিচ দিয়ে যাওয়ার কারণে জমি অধিগ্রহণ ও নির্মাণজনিত কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না। সাবওয়েটি নির্মিত হলে ঢাকা শহরের প্রায় ৮০ লাখ কর্মজীবী মানুষের মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ৪০ লাখ মানুষ মাটির নিচ দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে এবং মাটির উপরিভাগ যানজট ও জনজট মুক্ত থাকবে।
পরে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেনের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি হতে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণের লক্ষে যৌথভাবে চীনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্যানডন ও সিএসআই এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তির আওতায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার দোতলা সড়ক নির্মাণসহ মোট ১০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা হবে। প্রায় ১২০০ কোটি টাকার চুক্তিপত্রে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পক্ষে পঞ্চবটি হতে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে লিউ জিন স্বাক্ষর করেন।
সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রানসিসকো ডি আসিস বেনিতেজ সালাস, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
এ সময় সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা এমপিসহ সেতু বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।