হোম ফিচার ঝাঁপায় নিজের আইন বাস্তবায়ন করেছেন চেয়ারম্যান মন্টু

যশোর অফিস :

যশোরের মণিরামপুরের ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টু ও সহযোগিদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দুনীীতর বরপুত্রে পরিণত হয়েছেন এই ইউপি চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের রয়েছে বিশাল এক গুন্ডা বাহিনী। এই গুন্ডা বাহিনী পুরো ইউনিয়নকে সন্তস্ত্র করে রেখেছে। ফলে কেউ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বললেই তার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। এখানে আইনের শাসন নয়, শাসনের আইন বাস্তবায়ন করেছে চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টু।

এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঝাঁপা ইউনিয়নের বাঁওড়ের তীরবর্তী বাগেরালী গ্রামে বসবাস করেন ভিক্ষুক রেবেকা বেগম। এখানেই অসুস্থ স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে খোলা পরিবেশে মানবেতর জীবনযাপন করনে। ২০ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া পলিথিনের ছাউনি ঘরের এক পাশে চৌকিতে সন্তানকে রেখে পাশের অংশে মাটিতে মাদুর বিছিয়ে রাতযাপন করেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঘর দেওয়া হবে বলে তার কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসেন স্থানীয় ইউপি সদস্য। রেবেকা তার ও ছেলের নামে ঘরের জন্য সুদে ২০ হাজার টাকা এনে মেম্বারকে দেন। এর পর কেটে গেছে তিন বছরের বেশি সময়। কিন্তু ঘর মেলেনি তাদের ভাগ্যে। শুধু রেবেকাই নন, তার মতো ডাঙ্গীরপাড় এলাকার ভিক্ষুক মাজেদা, রাশিদা, রোকেয়া ও সামছুরকে প্রতিশ্রতি দিয়েও ঘর দেওয়া হয়নি। প্রতারণার শিকার হয়ে এখনো দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এসব হতদরিদ্ররা।

জানা গেছে, ঝাঁপা ইউনিয়নে ‘জমি আছে ঘর নাই আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্পের আওতায় ১০৩টি ঘরের বরাদ্দ আসে। ওই ঘর পুঁজি করে শুরু হয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অর্থবাণিজ্য করেন। নতুন ঘর পেতে গৃহহীনরা ছুটতে থাকেন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে। তখনই ঘর প্রতি দশ থেকে বিশ হাজার টাকা করে দাবি করেন। টাকা ছাড়া ঘর মিলবে না ভেবে ধার-দেনা করে বা সুদে টাকা এনে অসহায় দুস্থরা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের হাতে তুলে দেন। তবে গরিবের বিপুল টাকা পকেটস্থ হলেও কাউকে ঘর দিতে পারেননি মন্টু চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা।

ভিক্ষুক রাশিদা বলেন, ‘আমার মা ও আমি ভিক্ষা করে খাই, থাকার ঘর নাই। আমাদের গ্রামের আব্দুল আজিজ নামে একজন সরকারি ঘর পাইছে। তাই দেখে আমি চেয়ারম্যানের কাছে যাই। তিনি ঘর বাবদ দশ হাজার টাকা চান। এনজিও থেকে দশ হাজার টাকা তুলে চেয়ারম্যানের হাতে দিছি। কিন্তু আজও ঘর পাইনাই।’ একই পাড়ার ফাতিমা নামে এক বিধবা দুই বছর আগে চেয়ারম্যানকে চার হাজার টাকা দিয়েও ঘর পাননি বলে জানিয়েছেন।

ঘরের বিষয়ে একই অভিযোগ করেন হানুয়ারের কুলসুম বিবি, আহম্মদ আলী, গোলাম রসুল, মতিয়ার রহমান, আলা উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, সিদ্দিকুর রহমান, রহিমা খাতুন অভিযোগ করেন তাদের কাছ থেকে ঘর দেওয়ার নাম করে সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য লাকি বেগম ১০ হাজার করে টাকা নেন।

দোদাড়ীয়া গ্রামের হতদরিদ্র মহাসিন কবির, মিলন হোসেন, আবুল হোসেন, ফরিদা বেগম, কুতুব উদ্দিন, আফসার মোড়ল, ফিরোজ হোসেন, লাল্টু হোসেন, সাহাবুদ্দিন, নুর জাহান বেগম, মালেক মোড়ল অভিযোগ করেন স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য শাহিন আরা ঘর নির্মানের জন্য তাদের কাছ থেকে অনুরুপ হারে টাকা আদায় করেন।

ঘরের টাকার বিষয়ে অভিযোগের কারণে সরকারি ১০ টাকা কেজি দরের চাল ভ্যান চালক বারিক ও তার ভাই কাদেরের। পরে নতুন করে কার্ড করার জন্য ৬৫০ টাকা নিলেও কার্ডও হয়নি আজ পর্যন্ত। টাকা ফেরত পায়নি ভুক্তভোগিরা।

বৃদ্ধ ছকিনা বেগম অন্যের জমিতে বসবাস করেন। তারও কার্ড বাতিল করা হয়েছে। রাজগঞ্জ বাজারের রিজিয়া বেগমের কার্ড বাতিল করেছে চেয়ারম্যান মন্টু দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলার কারণে। একই ভাবে কার্ড বাতিল করা হয়েছে মাহবুবুর রহমান টুলু ও তার ভাইয়ের।

শুধু ঘর কিম্বা ১০ টাকা কেজি দরের চালের কার্ড নয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদফতরের অধীন গভীর নলকূপ স্থাপনে জনগণের কাছ থেকে উত্তোলনকৃত অর্থ (সহায়ক চাঁদা) পকেটে পুড়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টু। টাকা জমা না দেয়ায় ঠিকাদারদের বিল পরিশোধে বিপাকে পড়ে সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ।

সূত্র মতে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ঝাঁপা ইউনিয়ন ৫০টি গভীর নলকূপের বরাদ্দ পায়। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি নলকূপের অনুকূলে ৭ হাজার টাকা (সহায়ক চাঁদা) জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদফতরে জমা দেয়ার কথা। যা গ্রাহকের কাছ থেকে ওই ইউনিয়ন পরিষদ আদায় করে। এ হিসেবে ওই অফিসে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দেয়ার কথা থাকলেও নলকূপ স্থাপনের শুরুতেই ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টু ১ লাখ ২০ হাজার টাকা সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দেন। বাকি টাকা কয়েকদিন পরে জমা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও টাকা জমা না দেয়ায় নলকূপ স্থাপনের কাজ বন্ধ করে দেয় অফিস। পরে ইউপি চেয়ারম্যান বাকি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার চেক সোনালী ব্যাংক, রাজগঞ্জ শাখার অনুকূলে পরিশোধ করেন। কিন্তু টাকা সংগ্রহ করতে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই চেকের অনুকূলে টাকা নেই বলে জানিয়ে দেন। উপজেলা প্রকৌশলী অফিস খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ওই বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

সামছুল হক মন্টু নির্বাচিত হয়ে রাজগঞ্জ এলাকায় সংখ্যালঘু পরিবারের ২০০ বিঘা জমি দখল করে নেন। এ নিয়ে সে সময় সংবাদপত্রে শিরোনামও হয়েছিলেন সামছুল হক মন্টু। তৎকালীন যশোরের পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান ঘোষণা করে মন্টুকে ধরিয়ে দিতে পারলে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।

সামছুল হক মন্টুর রয়েছে বিশাল এক গুন্ডা বাহিনী। গুন্ডা বাহিনীর ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যাসহ একাধিক অভিযোগ।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টু বলেন, সরকার থেকে চিঠি দিয়ে কার্ড সংশোধন করতে বরছে, তাদের কার্ড সংশোধন করা হয়েছে। ঘর দেওয়ার নাম করে আমি কারও কাছ থেকে একটি টাকাও নিইনি। প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে চক্রান্ত করছে। তারাই এ অপপ্রচার চালাচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন