হোম খুলনাসাতক্ষীরা কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের ছড়া ছড়ি ডাক্তার নাই, আয়া, ওয়ার্ড বয় দিয়ে চলে নার্সের কাজ

কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের ছড়া ছড়ি ডাক্তার নাই, আয়া, ওয়ার্ড বয় দিয়ে চলে নার্সের কাজ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 77 ভিউজ

হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা):

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাতে মানা হচ্ছে না সরকারি কোন নীতিমালা। সরকারি অনুমোদন না নিয়ে এখানে শুরু হয় গলাকাটা ব্যবসা। উপজেলাতে প্রায় ২১ টি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এই সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশের নেই নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডাক্তার হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা এসব ক্লিনিকে এসে রোগী দেখেন।

নার্স সংকট থাকায় বেশির ভাগ ক্লিনিকে আয়া ওয়ার্ড বয় দিয়ে নার্সের কাজ করানো হয়। ফলে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে নানান বীড়ম্বনার শিকার হন। ভুল অপচিকিৎসার কারণে সেবা নিতে আসা অসুস্থ রোগীরা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। অধিকাংশ ক্লিনিকে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটলেও কোন আইনি পদক্ষেপ না থাকায় পার পেয়ে যায় ক্লিনিক গুলো। বর্তমান নতুন স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেন দায়িত্ব গ্রহণের পর এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন।

ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা জেলা সদরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ম্যাজিস্ট্রেট, র‍্যাবের অভিযানে গত বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা জেলা সদরে ২/১ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও উপজেলার কোন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে কোন অভিযান পরিচালনা শুরু হয়নি। অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের যথাযথ মনিটরিং না করায় মালিকরা ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক বিভিন্ন ক্লিনিকের ব্যবসায়িক পার্টনার। তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ক্লিনিক এর চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। উপায়ান্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। অধিকাংশ ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল খ্যাত গ্রাম্য ডাক্তাররা মোটা অংকের কমিশনের লোভে রোগী ধরার মিশনে ব্যস্ত থাকে।

কালীগঞ্জ উপজেলা জুড়ে ক্লিনিক গুলোতে ডেলিভারি রোগীদের বাগিয়ে এনে ১০ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ক্লিনিক মালিকদের প্রতি। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক গুলোর ছত্র ছায়ায় তাদের নিজস্ব আঙ্গিনায় গড়ে উঠেছে ক্লিনিক কাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা, নিরীক্ষা এখানে করা হয়। ২/১টি ক্লিনিক ছাড়া প্রায় সব ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসক না থাকায় বাইরে থেকে চিকিৎসক এনে মোট অংকের ভিজিট আদায় করে রোগীদের সেবা নিতে বাধ্য করা হয়। এই সমস্ত কারণে উপজেলা জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০২০ সালে অভিযানে নেমে ঝিমিয়ে পড়ে ২০২২ সালে ২৫ মে হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। পরে অদৃশ্য কারণে গতি কমিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। অবস্থা দেখে মনে হয় এই সমস্ত অসাধু বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের কাছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জিম্মি। কালিগঞ্জ উপজেলার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর কোন হাল নাগাদ বৈধ কাগজপত্র নাই। অথচ বছরের পর বছর মাসোহারা নিয়ে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা দেখ ভালো করে আসছেন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চাকরিরত জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন রেডিও টেকনোলজিস্ট ঢাকায় প্রশিক্ষণের নামে বছরের পর বছর কালীগঞ্জ উপজেলার পাওখালি নামক স্থানে তার ভাই গোলাম মোস্তফার নামে লাইফ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করে আসলেও তিনি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার ওই ক্লিনিকে ডাঃ মনিরুজ্জামান নামে একজন ডাক্তার থাকলেও সব সময় তাকে পাওয়া যায় না এবং হাসপাতালে নাই কোন প্রয়োজনীয় ডিপ্লোমা নার্স, প্যাথলজিস্ট তারপরও পরীক্ষার নামে নেওয়া হয় গলাকাটা ফিস। সপ্তাহের ছুটির দিনে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এনে একাধিক চেম্বার খুলে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় মোটা অংকের টাকা। অথচ এই হাসপাতালের কোন সরকারি অনুমোদন বা কাগজপত্র না থাকলেও বহাল তোবিয়াদে চলে আসছে। কালিগঞ্জের নাজিমগঞ্জ বাজারে সাংবাদিক কাম যমুনা ক্লিনিকের মালিক শরিফুল ইসলাম কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাক্তন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হাবিবুল্লাহ সাহেবকে খন্ডকালীন সময়ে বসালেও এখানে কোন নিয়ম মাফিক ডাক্তার বা নার্স না থাকায় অদৃশ্য শক্তির জোরে সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বছরের পর বছর চালিয়ে আসছে।

শ্যামনগর -কালিগঞ্জ মহাসড়কের পাশে মনিরুল ইসলাম মিলনের ঝরনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কোন ডাক্তার বা নার্স না থাকলেও মাসোহারা দিয়ে ঠিকই চালিয়ে আসছেন। মহৎপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এর পাশে আবিদ হোসেন ময়নার এ আলি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কোন ডাক্তার নার্স বা কাগজপত্র ছাড়া চলে আসছে বছর পর বছর। এ ছাড়াও নাজিম গঞ্জ বাজারে নুর ইসলাম নামে জনৈক ব্যক্তি নূহা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মৌতলা ফ্যামিলি ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করে আসলেও তাদের কোন অনুমোদন নাই। উত্তর কালিগঞ্জেরআব্দুস সালাম সার্জিক্যাল ক্লিনিক এবং বাস টার্মিনাল সংলগ্নে শের আলী ক্লিনিক পরিচালনা হয়ে আসলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা নার্স না থাকায় আয়া দিয়ে সব সেবা প্রদান করা হয়। পূর্ব নলতা হিজলা মোড়ে অবস্থিত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ডাঃ অনন্যার ইউনিক ক্লিনিকএন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

প্রতাপনগরের মাসুমের নামে পরিচালক সাজিয়ে নেপথ্যে তিনি দেখ ভালো করলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা নার্স খুঁজে পাওয়া যায়নি। নলতা বালিকা বিদ্যালয় এর প্রবেশ দ্বারে আলোর দিশারী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হয়ে আসলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা নার্স নাই। তারপরও সেখানে কোন রোগীর কোন ঔষধ কাজ করবে সেটাও নাকি পরীক্ষা করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও নলতা শেরে বাংলা ক্লিনিক, নাহার, ক্লিনিক এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার , নলতা ডায়াবেটিক হাসপাতাল, স্বপ্ন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক চললেও সেখানে নীতিমালা অনুযায়ী কোন ডাক্তার বা ডিপ্লোমা নার্স ও প্যাথলজিস্ট পাওয়া যায়নি। এরপরও উপজেলা জুড়ে গজিয়ে ওঠা ব্যাঙের ছাতার মত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক গুলো সাধারণ মানুষদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে চিকিৎসার নামে অপ চিকিৎসা চালিয়ে বছরের পর বছর জনগণকে ধোকায় ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেও দেখার কেউ নাই। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষে কামনা করেছ উপজেলা বাসী।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন