হোম খুলনাসাতক্ষীরা ইছামতিতে অশ্রুসিক্ত নয়নে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন, হয়নি দু’দেশের মিলনমেলা

মাহমুদুল হাসান শাওন, দেবহাটা:

দেবী দুর্গার বিসর্জনকে ঘিরে বিজয়া দশমীতে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীতে যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাংলাদেশ-ভারতের মিলনমেলা এবারও প্রশাসনিক নানা জটিলতায় পন্ড হয়েছে। ফলে ইছামতি নদীর পাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে অবশেষে সন্ধ্যায় অশ্রুসিক্ত নয়নে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছেন প্রতিবেশী দু’দেশের হাজার হাজার মানুষ।

প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে ইছামতির দুপাশে স্ব-স্ব সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)।

সম্প্রতি দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেববহাটায় আয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা সভায় এবছর প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে কেবলমাত্র প্রশাসন ও গণমাধ্যম ব্যতীত কোনো প্রতিমা বা দর্শনাথীবাহী নৌযান ইছামতির বাংলাদেশ অংশে চলাচল করতে দেয়া হবেনা মর্মে সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবি।

মঙ্গলবার সকালেই ইছামতি নদীর নোম্যান্স ল্যান্ডে পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক সারিসারি নৌকা দিয়ে ভাসমান ব্যারিকেড দেয় বিএসএফ। একইসাথে স্ব-স্ব সীমানায় স্পিডবোট ও অন্যান্য নৌযানে টহল জোরদার করে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে মিলনমেলার আশায় বিগত বছর গুলোর মতোই দুপুর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের দু পাড়ে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন দু’দেশের হাজার হাজার ভক্ত, দর্শনার্থী ও উৎসুক মানুষ।

দুপুরের পর নদীর ভারত অংশে টাকী, বশিরহাট ও হিঙ্গলগঞ্জসহ আশপাশের কিছু এলাকার প্রতিমা ও দর্শনার্থীবাহী নৌযান নদীতে নামতে পারলেও, বাংলাদেশ অংশে প্রশাসনিক কড়াকড়িতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত প্রশাসন ও সংবাদ সংগ্রহের জন্য পূর্বানুমোদিত দেবহাটা প্রেসক্লাবের নৌকা ব্যতীত নদীতে ভাসাতে দেয়া হয়নি কোন নৌযান।

এদিকে গেল কয়েকদিনের পূজা পরিক্রমা শেষে প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য ইছামতি পাড় থেকে শুরু করে উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।

দেশ বিভাগের আগে থেকে চলে আসা দু’দেশের ঐতিহাসিক মিলন মেলায় মিলেমিশে একাকার হওয়ার আশার ঘন্টার পর ঘন্টা বেড়িবাঁধে দাড়িয়ে থেকে হতাশ হয়ে সন্ধ্যায় অশ্রুসিক্ত নয়নে ইছামতিতে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন শেষে ঘরে ফেরেন দুই বাংলার কয়েক হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী।

যুগ যুগ ধরে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে ইছামতি নদীতে দু’দেশের মানুষের এ মিলনমেলা দেশ বিভাগের পরও বন্ধ হয়নি। কিন্তু কয়েক বছর আগে প্রতিমা বিসর্জনের দিনে ভারতের এক শিক্ষক ও গবেষকের সলীল সমাধি এবং তৎপরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখা, অবৈধ পারাপার, সন্ত্রাসী, পলাতক আসামী, দুষ্কৃতিকারীদের অবাধ যাতায়াতসহ নিরাপত্তা জনিত বিভিন্ন বিষয় মাথায় নিয়ে মিলনমেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় দু’দেশের প্রশাসন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন