হোম ঢাকা অ্যান্টিবায়োটিকের পরিবর্তে অ্যানেসথেসিয়ার ইনজেকশন পুশ, ১০ মিনিটে দুই রোগীর মৃত্যু

অ্যান্টিবায়োটিকের পরিবর্তে অ্যানেসথেসিয়ার ইনজেকশন পুশ, ১০ মিনিটে দুই রোগীর মৃত্যু

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 14 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই রোগীকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এক নার্সকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

মারা যাওয়া দুজন হলেন কটিয়াদী উপজেলার ধুলদিয়া এলাকার ফালু মিয়ার ছেলে স্থানীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মল্লিক (৩২) ও নিকলী উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের আবদুল কাদিরের ছেলে জহিরুল ইসলাম (২২)। তাদের মৃত্যুর খবরে স্বজনরা হাসপাতালে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বিক্ষোভও করেন। ঘটনায় জড়িত সংশ্লিষ্ট নার্সের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তারা। এতে হাসপাতালসহ আশপাশের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ভুক্তভোগীদের পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হার্নিয়ার চিকিৎসার জন্য ৭ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন মনিরুজ্জামান। আর খাদ্যনালিতে ছিদ্র থাকায় পেটে ব্যথা নিয়ে জহিরুল ১২ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবার সকালে দুজনের অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি হিসেবে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাদিরা বেগম ওয়ার্ডে দুজনকে অ্যানেসথেসিয়ার ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই মারা যান দুই রোগী।

মোজাফফর নামের এক রোগীর স্বজন জানান, অ্যানেসথেসিয়া অস্ত্রোপচারকক্ষে প্রয়োগ করার কথা ছিল, সেটি আগেই ভুল করে ওয়ার্ডেই প্রয়োগ করেন নার্স। এতেই বিপত্তি ঘটে।

তাদের মৃত্যুতে স্বজনরা হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে বিক্ষোভ করেন। এতে স্থানীয় লোকজনও অংশ নেন। বিক্ষুব্ধরা হাসপাতালে ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মারা যাওয়া মনিরুজ্জামান মল্লিকের ভাই আব্দুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘নার্সের ভুলের কারণে আমার ভাই মারা গেছে। অ্যানেসথেসিয়ার যে ইনজেকশন অস্ত্রোপচারকক্ষে দেওয়ার কথা ছিল সেটি ওয়ার্ডেই দেন নার্স। একই ভুল করেছেন অন্য রোগীর ক্ষেত্রেও। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। এর দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।’

জহিরুলের মৃত্যুতে হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন চাচাতো ভাই মো. মোজাফফর হোসেন। তিনি বলেন, ‘আর্থিক সমস্যার কারণে প্রাইভেটে না গিয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ভুল চিকিৎসার কারণে ভাইকে হারিয়েছি। ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই। যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।’

ভুল চিকিৎসায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করেছেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হেলিশ রঞ্জন সরকার। তিনি বলেন, ‘ওই নার্সকে বলা হয়েছিল দুই রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেওয়ার জন্য। কিন্তু নার্স ভুলে অ্যানেসথেসিয়ার ইনজেকশন পুশ করে ফেলেছেন। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। অপারেশন শুরুর আগে অ্যানেসথেসিয়া ইনজেকশন চিকিৎসকের দেওয়ার কথা ছিল। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত নার্সকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সার্জারি বিভাগের প্রধান অজয় সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট নার্সের সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন