রাজনীতি ডেস্ক:
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ, গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় পুরো শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। এতে এক পথচারী গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ৮ জন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে শহরের ইটেরপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ সোহাগ তালুকদার (৩০) শহরের হরিকুমারিয়া এলাকার দেলোয়ার তালুকদারের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ইজিবাইক চালক। আহত পুলিশ সদস্য রাজিবকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজীব সদর মডেল থানার ওসি’র দেহরক্ষী।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার দুপুরে মাদারীপুর আদালত প্রাঙ্গণে আগের মামলার কাজে যান ছাত্রলীগ নেতা সজীব সরদার ও সুমন কাজী গ্রুপের লোকজন। দুটিপক্ষ আদালত প্রাঙ্গণে মুখোমুখি হওয়ায় তাদের মধ্যে প্রথমে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শহরের ইটেরপুল এলাকায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। ঘণ্টাব্যাপী চলে সংঘর্ষ। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে যাত্রী ও পথচারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। খবর পেয়ে পুলিশ ফাঁকাগুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে পথচারী ইজিবাইক চালক সোহাগ তালুকদার গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় অন্তত ৮ জন। আহতদের উদ্ধার করে ভর্তি করা হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালে। তাদের মধ্যে রাজীব নামে এক পুলিশ সদস্যও রয়েছে।
আহত সোহাগ তালুকদারের স্ত্রী মাকসুদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে আমার স্বামী বাসা থেকে বের হয়। এ সময় সংঘর্ষের মধ্যে সে পড়ে যায়। পরে পুলিশের গুলিতে সে আহত হয়। যারা প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়, তাদের কিছুই বলে না, অথচ পুলিশ পথচারীদের ওপর এমন গুলি করে, এর বিচার হওয়া উচিৎ।’
প্রত্যক্ষদর্শী এক দোকানদার জানান, দুটিপক্ষ বোমা ফাটিয়ে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে জড়ায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভয়ে দোকান বন্ধ করে রাখি। তাদের হাতে বড় বড় অস্ত্র ছিল, কাছাকাছি থেকেও পুলিশ অসহায় ছিল।
মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াদ মাহমুদ জানান, হাসপাতালে কয়েকজন ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে এক পুলিশ সদস্য ও এক ইজিবাইক চালকও রয়েছে। ইজিবাইক চালকের মাথায় গুলি রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম সালাউদ্দিন জানান, আধিপত্যের জেরেই এ সংঘর্ষের ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থানা পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে ৭-৮ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক পুলিশ সদস্যও রয়েছে। এ ব্যাপারে নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
অভিযুক্ত সজীব সরদার মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আর সুমন কাজী সহ-সভাপতি। সজীব মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের অনুসারী। অপরদিকে সুমন ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিমের সমর্থক।