হোম ফিচার অবশেষে ইউএনও-এর হস্তক্ষেপে বৃদ্ধ দম্পতির সকল দায়িত্ব নিল ছোট ছেলে

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি:

অবশেষে ইউএনও-এর হস্তক্ষেপে বৃদ্ধ দম্পতির সকল দায়িত্ব নিল ছোট ছেলে সাঈদ গাজী। কেশবপুরে বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভুলিয়ে জমি লিখে নিয়ে ভিটাছাড়া করেছিল দুই ছেলে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা শালিসি বিচারে মিমাংসা করতে না পেরে নিরুপায় হয়ে উপজেলা প্রশাসনের দ্বারে এসেছিলেন চার মেয়েসহ ওই দম্পতি। শেষ বেশ সেটা শান্তিপূর্ণভাবে মিমাংসা হলো। সম্প্রতি এ ঘটনাটি ঘটেছিল ৯ নং গৌরীঘোনা ইউনিয়নের বুড়ুলী গ্রামে।

কেশবপুরে বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভিটাছাড়া করলো দুই ছেলে। এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ অনলাইনে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়।

গত রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাবা বারিক গাজী (৮৪) ও মা শহর বানুকে (৭৮)-কে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাদের দুই ছেলে সাজ্জাদ গাজী ও সাঈদ গাজী। নিরুপায় হয়ে ওই বৃদ্ধ দম্পতি পাশের দশকাহুনিয়া গ্রামে মেজ মেয়ে কোহিনুর বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ বিষয় জানতে পেরে তার চার মেয়ে তাদের সহায় সম্বলহীন বাবা-মাকে ভ্যানে চড়িয়ে সুষ্ঠু বিচারের আশায় কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে নিয়ে হাজির হন। তাদের অভিযোগ পাওয়ার পর এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও এমএম আরাফাত হোসেন।

এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (০৩ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন তাঁর কার্যালয়ে দুই ছেলে ও ৪ মেয়েসহ নাতি-নাতনীদের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন। সিদ্ধান্তটি একটি অঙ্গীকারনামার মাধ্যমে হয়েছে। অঙ্গীকারনামায় তাঁদের বাবা-মায়ের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন ছোট ছেলে সাঈদ গাজী, তা না মানলে লিখে দেওয়া জমি ফেরতসহ ছোট ছেলে সাঈদ গাজীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। সাঈদ গাজী স্বেচ্ছায় অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে খুশি মনে জন্মদাতা বৃদ্ধ বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি যান।

এই শান্তিপূর্ণ মীমাংসার সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন, কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুর রহমান, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর রবিউল ইসলাম, গৌরীঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান কাজল প্রমুখ।

গৌরীঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান কাজল বলেন, “পিতা-মাতার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছোট ছেলে সাঈদ গাজী খেতে-পরতে দেবে ও বসতবাড়ির একটি কক্ষে রাখবে বলে অঙ্গীকার করেছে। বিষয়টি একমাস পর্যবেক্ষণ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ দেওয়াসহ যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণে ব্যর্থ হলে ছোট ছেলে তার সম্পত্তি পিতাকে ফেরত দেবে।”

বৃদ্ধ বারিক গাজী বলেন, “স্যার (ইউএনও) যে বিচার করে দেছে, আমি তাতে খুশি। ছোট ছেলের সঙ্গে বাড়ি যাচ্ছি। একমাস দ্যাখবো। যদি খাতি-পরতি না দেয় তাহলে আবার স্যারের কাছে আসবো।”

বৃদ্ধ বারিক গাজীর ছোট ছেলে সাঈদ গাজী বলেন, “বাপ-মা আমার বাড়ি থাকবে, তাঁরা যে কয়দিন বেঁচে থাকে আমি তত দিন খাওয়া-পরাসহ সকল দায়িত্ব নিয়েছি।”

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন বলেন,”ওই বৃদ্ধ দম্পতির অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সালিসে ছোট ছেলে সাঈদ গাজী তার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের দ্বায়িত্ব নিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (ইউপি সদস্য) বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। পরবর্তীতে যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া স্বেচ্ছায় ছোট ছেলে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়ে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছেন।”

কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুর রহমান জানান, “আজকের শালিসি বিচারে ছোট ছেলে সাঈদ গাজী তার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের সকল দ্বায়িত্ব নিয়েছেন এবং অঙ্গীকারনামায় স্বক্ষর করেছে। এর কোনপ্রকার ত্রুটি হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন