হোম জাতীয় নরসিংদীর বেলাবোতে প্রধান শিক্ষক বহিষ্কার, সভাপতির বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ

জাতীয় ডেস্ক :

নরসিংদীর বেলাবোতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের জেরে প্রধান শিক্ষক সাময়িক বহিষ্কার এবং সভাপতির বিরুদ্ধে শিক্ষা বোর্ডে পাল্টা অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে।

উপজেলার দক্ষিণধুরু উচ্চ বিদ্যালয়ে এধরনের পাল্টাপাল্টি একাধিক অভিযোগ, বহিষ্কার ও দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটেছে। বেলাবো উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাজমুল হাসান ভূঁইয়া এসব অভিযোগের তদন্ত করছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সভাপতি ও অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়া ও প্রধান শিক্ষক আবু তাহেরের মধ্যে বিদ্যালয়ের নানা বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির ৪ জন কর্মচারী নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য হন ৪ জন। ৪ জনকে নিয়োগ দিতে প্রধান শিক্ষক আবু তাহের বারবার সভাপতিকে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করতে অনুরোধ করলেও সভাপতি ‘অনিয়ম হয়েছে’ এমন ইঙ্গিত পেয়ে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকেন।

নিয়োগ পরীক্ষার ১২ দিন পর পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হওয়া বাকি ১২ জন ‘পরীক্ষায় অনিয়ম হয়েছে’ অভিযোগ করে ফের পরীক্ষা নিতে সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন করেন। পরে পরিচালনা কমিটি সভা করে ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করেন।

অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আলাদা আলাদাভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে না পারায় তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

জানা যায়, নতুন কমিটি গঠনের পর চলতি বছরের ১৪ মে প্রথম সভা আহবান করেন কমিটির সদস্য সচিব ও প্রধান শিক্ষক আবু তাহের। কিন্তু তিনি সভা আহ্বান করে নিজেই উপস্থিত থাকেননি। এমনকি রেজুলেশন খাতাও তার বাড়িতে নিয়ে যান।

এ অবস্থায় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কমিটির অন্য সদস্যদের সিদ্ধান্তে নতুন খাতা ক্রয় করে সভার রেজুলেশন করেন সভাপতি। পরে একাধিকবার সভা আহবান করা হলেও প্রধান শিক্ষক নানা অজুহাতে সভায় অনুপস্থিত থাকেন এবং কমিটিকে অসহযোগিতা করেন।

অসহযোগিতা বাড়তে থাকলে গত ২১ জুন বেলাবো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন কমিটির সভাপতি আবুল কালাম।

অভিযোগের পর উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কমিটি।

পরপর তিনটি নোটিশের জবাব না দেয়াসহ এরপর নানা অনিয়মের কারণে তাকে কেনো সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না কারণ জানতে চাওয়া হয়। এসবের কোন জবাব না দিয়ে ওই শিক্ষক খারাপ আচরণ অব্যাহত রাখেন। ফলে চলতি মাসের ১২ তারিখে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে কমিটি।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও অশিক্ষকসুলভ আচরণের অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অনাস্থা দেন।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক কোন মিটিংয়ে আসেন না। নোটিশ খাতা রেজুলেশন খাতা বাড়িতে নিয়ে যান। কমিটির সাথে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করেন না। শিক্ষকরা অনাস্থা দিয়েছেন। কমিটিও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। আমাকে হেয় করার জন্য উনি নিজে উল্টো বোর্ডে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আবু তাহের বলেন, সভাপতির বিরুদ্ধে আমি বোর্ডে অভিযোগ দিয়েছি, যার তদন্ত চলমান। এ অভিযোগের তদন্তকালীন আমার বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্ত বা অন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার তাদের নেই।

বেলাবো উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ভূঁইয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক সভাপতির বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন