বেনাপোল প্রতিনিধি :
সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশও স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ে। আক্রান্তও হয় অনেকে । মৃত্যুও ঘটে বিভিন্ন বয়সের মানুষের। তবে করোনার প্রভাব এর ঝুকিতে সবচেয়ে বেনাপোল স্থল বন্দর। এই বন্দরটি আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট হওয়ায় সারা বিশ্বের পর্যটক, ব্যবসায়ি, সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ ভারত বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করে থাকে। আর স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়তে হয় বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মীদের। এমনকি করোনা পজিটিভে আক্রান্ত হয় মোহাম্মাদ হাসানুজ্জামান নামে একজন স্বাস্থ্য কর্মী। তারপরেও সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানব সেবায় কর্মরত রয়েছে এই চেকপোষ্টে।
বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার দেশী বিদেশী পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করে। করোনার প্রথম ধাপ থেকে হাসানুজ্জামান নামে ওই স্বাস্থ্য কর্মী এই চেকপোষ্টে কর্মরত ছিলেন। প্রতিদিন তার ভারত ফেরত যাত্রীদের সাথে প্রত্যাক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য মিলিত হতে হয়। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে হাসানুজ্জামান বিগত ২৬ এপ্রিল ২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা শেষে আবারও সে যোগদান করে ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে। করোনার দ্বিতীয় ধাপে আবারও সে এই ইমিগ্রেশনে জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারতে করোনা মহামারি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ সরকার ভারত ফেরত পাসপোর্টযাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। আর ইমিগ্রেশনের মেডিকেল অফিসারদের পাশাপাশি মুল ভুমিকা পালন করছেন স্বাস্থ্য কর্মী হাসানুজ্জামান।
ভারত ফেরত যাত্রীদের ইতিমধ্যে বেনাপোল এর ১৩ টি আবাসিক হোটেলে ৩৭২ জনকে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর এসব হোটেলে রয়েছে সাধারন যাত্রীদের পাাশাপাশি নানা ধরনের জটিল রোগিরা। এসব হোটেলে থাকা যাত্রীদের প্রতিদিন সকাল বিকাল এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত খোজ খবর ও রাখছেন এ্ই স্বাস্থ্য কর্মী। ভারতে চিকিৎসা শেষে ফেরত জটিল রোগিদেরও তিনি মেডিকেল অফিসারদের নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বেনাপোল নিশাদ হোটেলের পাসপোর্টযাত্রী ওহিদুর রহামান,সেলিম রেজা ও অন্ধ প্রতিবন্ধী আমীর হামজা বলেন আমরা গত ২৮ এপ্রিল বেনাপোল ইমিগ্রেশনে হয়ে দেশে ফিরি। এরপর এই হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে। এখানে প্রতিদিন স্বাস্থ্য কর্মী হাসানুজ্জামান আমাদের খোজ খবর রাখছেন। তবে অসুবিধা হচ্ছে হোটেল থেকে বের হতে পারছি না। ভাল খাবারও আনতে পারছি না।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে স্বাস্থ্যকমী হাসানুজ্জামান এর কাছে পাসপোর্টযাত্রীদের সেবা নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, এটা একটা আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট। করোনা মহামারিতে আমরা এখানে জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছি। প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত এসব যাত্রীদের পাসপোর্ট ও স্বাস্থ্য বিভাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে হোটেলে রাখা সহ তাদের খোজ নিতে হয়। আমি যশোর সিভিল সার্জন মহাদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। কারন আমরাতো দেশের সেবা মুলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। আমাদের কাজ হচ্ছে সেবা দেওয়া।
বেনাপোল চেকপোষ্ট বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক মিলন হোসেন বলেন, কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রে মৃত্যুর হার বেড়েছে। সেই সাথে বাংলাদেশেও বেড়েছে। আর বেনাপোল একটি ঝুকিপুর্ন স্থল বন্দর। এপথে যাত্রীরা যে হারে আসে সে তুলনায় স্বাস্থ্যকর্মী অনেক কম। ১৩ টি হোটেলে ৩৭২ জন যাত্রীর জন্য এখানে জীবনের ঝুকি নিয়ে হাসান নামে মাত্র একজন স্বাস্থ্য কর্মী দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতে আরো স্বাস্থ্য কর্মীর প্রয়োজন। বেনাপোল বাজারের সচেতন নাগরিক মাস্টার নুরুল ইসলাম বলেন, বেনাপোল শহর এখন একটি ঝুকি পুর্ন শহর। এখানের হোটেল গুলোতে ভারত ফেরত অনেক যাত্রীদের রাখা হয়েছে। সে তুলনায় স্বাস্থ্য কমী নেই। মাত্র একজন কর্মীকে এদের তদারকি করতে দেখা যায়। এছাড়া এই চেকপোষ্টে কাজ করছে শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) রাসনা শারমিন মিথি, নাভারন সার্কেল এর সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান, বেনাপোল পোর্ট থানা ওসি মামুন খান সহ প্রশাসনের আরো কর্মকর্তা কর্মচারী।