হোম আন্তর্জাতিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রুশ তেল আমদানি কমাতে যাচ্ছে ভারত

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রুশ তেল আমদানি কমাতে যাচ্ছে ভারত

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 82 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাশিয়ার দুই বৃহৎ তেল কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার পর রুশ তেল আমদানি ব্যাপকভাবে কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় তেল পরিশোধনাগারগুলো। বৃহস্পতিবার সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির পথ সুগম করতে পারে।

নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক কমার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। এই শুল্কের অর্ধেকই রুশ তেল কেনার প্রতিক্রিয়ায় আরোপ করা হয়েছিল। ফলে মস্কো থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি কমালে এ শুল্ক এশিয়ার অন্যান্য দেশের সমান পর্যায়ে নামতে পারে বলে আলোচনায় রয়েছে।

ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণের পর ২০২২ সাল থেকে ভারত সমুদ্রপথে রাশিয়ার ছাড়মূল্যের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে দেশটি দৈনিক গড়ে ১৭ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার দুই তেল জায়ান্ট লুকওয়েল ও রসনেফটের বিরুদ্ধে আরোপ করা হয়। ভারতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি তেল কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, তারা রুশ তেল আমদানি কমাবে বা সম্পূর্ণ বন্ধ করবে। রসনেফটের সঙ্গে তাদের বড় আকারের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিও স্থগিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

রিলায়েন্সের এক মুখপাত্র বলেন, রুশ তেল আমদানির পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া চলছে এবং কোম্পানিটি ভারতের সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করবে।

একইভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামও তাদের বাণিজ্যিক নথি পর্যালোচনা করছে, যাতে রসনেফট বা লুকওয়েল থেকে সরাসরি কোনও সরবরাহ না আসে। তবে ভারতের জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

এক শোধনাগার কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা বিশাল কাটছাঁট করব। তবে তা একেবারে শূন্যে নামবে না, কারণ কিছু তেল মধ্যস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বাজারে আসবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এটি প্রথম বড় নিষেধাজ্ঞা। ইউক্রেন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আরবিসি ক্যাপিটালের বিশ্লেষক হেলিমা ক্রফট বলেন, যদি ট্রাম্প প্রশাসন এবার কথার সঙ্গে কাজও করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে প্রবেশাধিকার রাখতে চাওয়া শোধনাগারগুলো রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে।

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২১ নভেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিগুলো রসনেফট ও লুকওয়েলের সঙ্গে তাদের লেনদেন বন্ধ করার সময় পাচ্ছে।

এক ভারতীয় কর্মকর্তার মতে, সব কিছু নির্ভর করছে ব্যাংকের ওপর। যদি ব্যাংক অর্থপ্রদানে সম্মতি দেয়, তাহলে কেনা চলবে, না হলে আমদানি শূন্যে নেমে আসবে।

রিলায়েন্স ভারতের গুজরাট রাজ্যের জামনগরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রিফাইনিং কমপ্লেক্স পরিচালনা করে। কোম্পানিটি রসনেফট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ ব্যারেল তেল কেনে। তারা সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য ও ব্রাজিল থেকে তেল কেনা শুরু করেছে, যা আংশিকভাবে রুশ সরবরাহের বিকল্প হতে পারে।

অন্যদিকে, রসনেফটের অংশীদার ভারতীয় রিফাইনার নয়ারা এনার্জিও রুশ তেল কেনে, তবে কোম্পানিটি এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।

বাণিজ্য সূত্র বলছে, রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলো সাধারণত রসনেফট বা লুকওয়েল থেকে সরাসরি তেল কেনে না, বরং মধ্যস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ক্রয় করে থাকে।

নিষেধাজ্ঞা জারির পর বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম আবারও ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন