অনলাইন ডেস্ক:
শেখ হাসিনাকে ভারতের বেতনভুক্ত কর্মচারী অ্যাখ্যা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ভারতের পেসক্রিপশনে আলেম ওলামাদের হত্যা করা হয়েছে। তারা এখন খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ভারত অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে ওঠবে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত গণজমায়েত কর্মসূচি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশে বিভিন্ন সময় গুম খুনের শিকার ব্যক্তিদের স্বজন, জুলাই-আগস্টের আহত ছাত্র-জনতা এবং বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতারা যোগ দেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ইতিহাসের কোনও দেশে নাই রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, নায়ক ফ্যাসিস্টদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে— কারা খুনিদের ক্যান্টমেন্টে আশ্রয় দিয়েছে। কারা পুলিশ ভাইদের, বিজিবিকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গুলির নির্দেশ দিয়েছে। সেই সাংবাদিকদের কলম ভেঙে দিতে হবে— যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পক্ষে লিখে গেছে।
তিনি আরও বলেন, শহীদের রক্ত শুকানোর আগে অনেক মুরব্বি আওয়ামী লীগকে ক্ষমার কথা বলছেন, নির্বাচনে আনার কথা বলছেন। আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের আগে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে, সেটি শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানী করা হবে।
গণজমায়েত কর্মসূচি অনুষ্ঠানে মায়ের ডাকের প্রধান সমন্বয়ক সানজিদা খানম তুলির সঞ্চালনায় জুলাই-আগস্টের নেতৃত্বের থাকা ছাত্র-জনতা, আহত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এসময় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, বিগত ১৫/১৬ বছর নয়— ৭১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির গণভিত্তি ছিল না। তারা ভারতের সহায়তায় ক্ষমতা এসেছে। তাদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি, জাতীয় ঐক্য নস্যাতের চেষ্টা চলছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, কেবল আমার মুখকে এমন করেছে তা নয়। আমার সামনে একজনের মুখের এক পাশ দিয়ে গুলি বিদ্ধ হয়ে অন্য পাশ বের হয়ে গেছে। আমার কথা এখন বলতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমাকে বলতে হবেই। আমাদের সবাইকে ঐকবদ্ধ থাকতে হবে। সবাই ঐকবদ্ধ থাকলে হাসিনা আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আমি হাসিনার কঠিন শাস্তি চাই। তার ফাঁসি চাই।
জুলাইয়ে আন্দোলনের সময়ে পুলিশের গুলিতে আহত আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি সাধারণ একটি মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে হঠাৎ করেই পুলিশ গুলি করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পায়ে বুলেট লাগে। আমার কোনও অপরাধ ছিল না। তারপরও কেন আমাকে গুলি করা হলো? এখনও এই পা নিয়ে আমি কষ্ট করছি। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে জুলুমের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এখানে জড়ো হয়েছেন। এখান থেকে আমরা পিলখানা হত্যাকাণ্ড, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম, জুলাই গণহত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা, ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জামায়াত ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, আমার বাংলাদেশ পার্টির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।