ইবি সংবাদদাতা:
২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অভ্যন্তরে বাস চাপায় নিহত হয় তৌহিদুর রহমান টিটু। তিনি বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যদের কোনো একজনকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দেয়ার এবং টিটু নামে যেকোন একটি ভবনের নামকরণের আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন। পরে এ ব্যাপারে একটি অঙ্গীকারনামা করা হয়। কিন্তু তার মৃত্যুর ১০ বছর পার হলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি প্রশাসন।
মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) অবস্থিত প্রেস কর্ণারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান টিটুর ছোট ভাই তারেক আজিজ। এসময় তার পিতা আব্দুল আজিজ, ইবি প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজমুল হক জাইম ও টিটুর পরিবারের অন্য সদস্যরাসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
টিটুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, টিটুর ছোট পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে চার বোনের বিবাহ হয়েছে এবং ছোট ভাই সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। টিটুর বয়স্ক বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করার পর এখন তিনি কর্মক্ষমতা হারিয়েছে ফেলেছেন। বর্তমানে পরিবারটির হাল ধরার মতো কেউ নেই। বিগত দশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলেও কোন লাভ পায়নি।
তারা বিরোধী দলের সাথে জড়িত থাকায় তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। তবে ২০১৬ সালে তার বোন আফরোজা আক্তার লাকি কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে থোক বরাদ্দে (চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী চাকুরী) নিযুক্ত করেন। তবে চাকরিতে যোগদানের আট বছর পার হলেও এ চাকুরি স্থায়ী করা হয়নি। এদিকে ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিটুর পরিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিনটি দাবি উপস্থাপন করেন। তাদের দাবিগুলো হলো, অনতিবিলম্বে টিটুর বোনের চাকরির স্থায়িকরন করা, তার স্মৃতি রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবনের নামকরণ করা এবং তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
টিটুর বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমার অনেক আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু আমার ছেলের মৃত্যুর ১০ বছর পার হলেও কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমার পরিবারের একজনকে স্থায়ী চাকুরি দেওয়ার কথা হলেও এখন পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করুক।’
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবাহী ভাড়ায় চালিত ঝিনাইদহগামী বাসে উঠার চেষ্টা করে। এসময় বাস চালক হঠাৎ দ্রুত চালালে সে বাসে উঠতে ব্যর্থ হয়ে রোডে পরে যান। এ সময় পেছন থেকে ভাড়ায় চালিত অপর একটি বাস (সাগর পরিবহন) দ্রুতবেগে তার গলার উপর দিয়ে চলে যায়। এতে গলা ছিঁড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন টিটু। এর পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসসহ প্রায় ৪০টি বাস পুড়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এতে ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় চার মাস বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়।
গাড়ি পোড়ানোর ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০০ জনকে আসামি করা হয়। তবে ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।