হোম জাতীয় গ্রাহক ভোগান্তি: বিআরটিএ অফিসে দুদকের অভিযান

গ্রাহক ভোগান্তি: বিআরটিএ অফিসে দুদকের অভিযান

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 76 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা বদলী-যাচাই, পেশাদার-অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ ইত্যাদি সেবা নিতে বিআরটিএ অফিসকে গ্রাহকের অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে শরীয়তপুরের বিআরটিএ অফিসে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) শরীয়তপুর অফিসে অভিযান পরিচালনা শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর টিম।

দুদক সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটির হটলাইন নম্বর ১০৬ এ অভিযোগ ছিল রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা বদলী-যাচাই, পেশাদার-অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ ইত্যাদি সেবা নিতে বিআরটিএ অফিসকে গ্রাহকের অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে শরীয়তপুরের বিআরটিএ অফিসে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

অভিযানের সময় কাওসার হাওলাদার নামে এক যুবক দুদক টিমের কাছে অভিযোগ করেন ৩ বছর আগে বিআরটিএ অফিসের কর্মচারী পরিচয়ে ওবায়দুর নামে এক লোক তার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নিয়ে লাইসেন্স করে দেননি। পরে কাওসারের মোবাইল ফোন থেকে দালাল চক্রের সদস্য ওবায়দুলকে কল করা হলে কোর্ট চত্বরের একটি চায়ের দোকানে যেতে বলেন ওবায়দুর। কাওসারের সঙ্গে ছদ্মবেশে দুদকের টিম ওই চায়ের দোকানে গিয়ে ওবায়দুরকে হাতেনাতে ধরে বিআরটিএ অফিসের সহাকারী পরিচালক মো. নুরুল হোসেনের কক্ষে দালাল ওবায়দুল, ভুক্তভোগী কাওসার ও অফিসের মোটরযান পরিদর্শক মেহেদী হাসানকে দুদকের টিম জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় ওবায়দুর কাওসারের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে দুদক টিমের নির্দেশনায় ভুক্তভোগী কাওসারকে টাকা ফেরত দেন ও এমন কাজ আর করবে না শর্তে ওবায়দুরকে ছেড়ে দেয় দুদক।

ভুক্তভোগী কাওসার হাওলাদার গোসাইরহাট উপজেলার তর সাতমাটিয়া গ্রামের ইয়াসিন হাওলাদারের ছেলে। তিনি বলেন, তিন বছর আগে বিআরটিএ অফিসে এসেছিলাম লাইসেন্স করতে। অফিসে আসার পরে ওবায়দুর নামে এক লোকের সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। তিনি তখন আমাকে বলেন, লাইসেন্স করতে তো ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগে। আপনি ৯ হাজার টাকা দেন। ওনার কথা মতো আমি এক চায়ের দোকানিকে সাক্ষী রেখে ৭ হাজার টাকা দেই তাকে। টাকা নিয়েও উনি আমার কাজ করেননি। তিন বছরে আমি প্রায় ৫ থেকে ৭ টি মামলার শিকার হয়েছি। দুদক টিমের সহযোগিতায় আমার টাকা আমি ফেরত পেয়েছি আজ।

বিআরটিএ অফিসের দালাল চক্রের সদস্য ওবায়দুর রহমান বলেন, লোকবল সংকটের কারণে মৌখিক ভাবে আমাদের অফিস সহায়ক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। লোকবল সংকট থাকার কারণে আমরা কাজ করতাম। বিআরটিএ ঘুষ চক্রের সঙ্গে সহকারী পরিচালক, ইন্সপেক্টর সবাই জড়িত। আমাদের শুধুমাত্র ব্যবহার করা হয়। ব্যবহার হতে গিয়ে কিছু স্বার্থে এতদিন কাজ করেছি, এখন অফিসে লোক নিয়োগ হওয়ায় আমাদেরকে চলে যেতে বলেছে , আমরা এখন আর অফিসে আসি না। কিন্তু এখনও বিআরটিএ অফিসের ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে সহকারী পরিচালক, ইন্সপেক্টরসহ সবাই জড়িত। রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা বদলী-যাচাই, পেশাদার-অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স, রিনিউ লাইসেন্স সকল ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুর বলেন, কোনও সেবাগ্রহীতা আসলে সহকারী পরিচালক, ইন্সপেক্টর স্যার একটা চার্জ নেন, ওই চার্জের ওপর ভিত্তি করে আমরা টাকা দাবি করি। তাদের বিভিন্ন ফাইলে বিভিন্ন ধরনের চার্জ। নির্দিষ্ট কোনও চার্জ নেই। অফিসারদের চার্জের ওপর ভিত্তি করেই অতিরিক্ত টাকা লেনদেন করা হয়। ফাইলে যত ভুল থাকুক, অতিরিক্ত টাকা দিলে সরকারের আইন অনুযায়ী কাজটা সম্পন্ন করে দেন তারা।

অতিরিক্ত টাকা কয় ভাগে ভাগ করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুর বলেন, আমাদের মতো অনেক লোকই আছে। এই জেলায় অনেক শোরুমের লোকজন আছে, বিভিন্ন যানবাহনের মালিক সমিতির লোক আছে। এদের সঙ্গে অফিসাররা যোগাযোগ রক্ষা করে। টাকার ভাগ তো অনেক ভাগে বিভক্ত হয়। বলতে গেলে তো বড় বড় রাঘব-বোয়ালদের নাম চলে আসবে। বিআরটিএ সেক্টরের সভাপতি এডিএম স্যার, জেলা টিআই স্যার সদস্য, সিভিল সার্জন ডাক্তার সদস্য। নিশ্চিত করে বলতে পারব না যে এরা ভাগ পায়, কারণ আমি তো সরাসরি দেখিনি। কিন্তু এখানে যেসব কর্মকর্তা আছে তারা সবাই ভাগ করে খায়।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত) মো. নুরুল হোসেন বলেন, দুদক টিম সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এসেছেন। তারা তাদের কাজকর্ম করে গেছেন। আমি বিআরটিএ শরীয়তপুরে যোগদানের পর এখানে কোনও দালাল নেই। যে অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক এসেছে, সেই অভিযোগ আমি যোগদান করার অনেক আগের। মোটরযান পরিদর্শক মেহেদী হাসানের সঙ্গে দালালের সম্পর্ক রয়েছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তার বিষয়ে যদি ওমন কিছু পাওয়া যায়, তবে তা তদন্ত সাপেক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমি যোগদানের আগে কিছু গ্রাহককে হয়রানির দৃষ্টান্ত আছে। এখন আর কোনও গ্রাহক হয়রানির শিকার হয় না।

অভিযান শেষে দুদক সমন্বিত মাদারীপুর অফিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, এক গ্রাহক বিআরটিএ শরীয়তপুর অফিস থেকে বিভিন্ন সময় হয়রানি ও ঘুষ লেনদেনের শিকার হোন, এরই প্রেক্ষিতে আমাদের হেড অফিস থেকে আমাদেরকে অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দিলে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সত্যতা যাচাই করে দেখেছি।

অভিযানে প্রাপ্ত রিপোর্ট আমরা হেড অফিসে পাঠাবো। এরপর মাননীয় কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আপনারা দেখেছেন অভিযানের সময় একজন দালালকে আমরা ধরেছি। যে সেবা গ্রহীতা থেকে ওই দালাল টাকা নিয়েছিল, সেই সেবাগ্রহীতাকে আমরা টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। গণমাধ্যম বিভিন্ন সময় আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন, আশা করছি এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন