সাইফুল ইসলাম শিশির, কুমিল্লাঃ
কুমিল্লার চান্দিনায় ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনতাকিম আশরাফ টিটুর বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানি ও নৌকা প্রতীক সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তকে নিয়ে ভোটারদের মাঝে ধর্মীয় উস্কানি দেন বলে অভিযোগ করেন নৌকা প্রতীকের নেতা-কর্মীরা।
এছাড়াও নৌকা প্রতীকের ১৫-১৬জন নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় ঈগল প্রতীক প্রার্থী মুনতাকিম আশরাফ টিটু ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চান্দিনা উপজেলা রোডস্থ নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওই অভিযোগ করেন নৌকা সমর্থিত প্রার্থীর নেতা-কর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও নৌকা প্রতীক প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক মো. মফিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এশিয়া মহাদেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শেখ হাসিনা যখনই অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এর হাতে নৌকার প্রতীক তুলে দিয়েছেন সেদিন থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু ও তার সমর্থকরা ধর্মীয় উস্কানি মূলক কথা বলে আমাদের নৌকার বিরোধীতা করে আসছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই নৌকার বিরোধীতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে। জনসমর্থনহীন ওই প্রার্থী প্রকাশ্যেই ঘোষণা দেন ‘যেখানেই নৌকা দেখবে সেখানেই প্রতিহাত করা হবে’। আমাদের নেতা সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এবং ধর্ম নিরপেক্ষ আওয়ামী লীগ সরকারের ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে টিটু ও তার সমর্থক নেতা-কর্মীরা নানা রকম ধর্মীয় উস্কানি ও আমাদের নেতাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে আসছে।
গত শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঈগল প্রতীকের সমর্থক মোখলেছুর রহমান দুলু মাষ্টার পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের নৌকার নির্বাচনী অফিসে গিয়ে নৌকা সমর্থক জসিম উদ্দিনকে হুমকি দেয় এবং বলেন, ‘একজন মুসলমান হইয়া হিন্দুর রাজনীতি করতে তোদের লজ্জা হয় না ?’ তার ওই কথা শুনে আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ করতেই তারা তাকে মারধর শুরু করে। প্রায় ৩০ মিনিট পর অনুমান ৬টার দিকে হামলায় আহত ব্যক্তিকে নিয়ে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে আমাদের নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে আসার পথে আমরা হারং উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আসামাত্র একটি কালো প্রাইভেটকার যোগে বর্তমান মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়ার দুই ছেলে তানিন ও লেনিন এর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী টিটু বাহিনী তাদের উপর আবারও হামলা করে।
এ সময় ২নং ওয়ার্ডের নৌকা প্রতীকের একটি উঠান বৈঠকে যাওয়ার সময় তাদেরকেও মারধর করে টিটু বাহিনী।একই সময়ে বরকইট ইউনিয়নের শ্রীমন্তপুর গ্রামের নৌকা প্রতীকের অফিসে হামলা করে আমাদের নেতা-কর্মীদের মারধর ও অফিস ভাংচুর করে। তিনটি পৃথক ঘটনায় আমাদের ৯জন নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। এছাড়াও অন্তত ৫-৬জন আহত হয়। ১নং শুহিলপুর ইউনিয়নের বড়ইয়া কৃষ্ণপুর গ্রামে আমাদের নির্বাচনী মাইক ভাংচুর করে টিটু বাহিনী। এতো কিছুর পর আমাদের নেতা-কর্মীরা এখনও ধৈর্য্য সহকারে এই হামলা সহ্য করে আসছে। তারা তাদের নিজের গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে আমাদের নেতা-কর্মীদের ফাঁসাতে সাংবাদিকদের কাছে নিয়মিত মিথ্যাচার করে সংবাদ প্রচার করছে। আমরা এমন ঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানাই এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ চান্দিনার রাজনীতির মাঠে বিশৃঙ্খলাকারী প্রার্থী মুনতাকিম আশরাফ টিটুসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে আইনের আওতায় আনার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন উপজেলা যুবলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি মনির খন্দকার, কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মো. শামীম হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাংগঠনি সম্পাদক ফয়সাল বারী মজুমদার মুকুল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল, উপজেলা যুব মহিলা লীগ সভাপতি রুবি আক্তার, পৌর কৃষকলীগ সভাপতি জয়নাল আবেদীন জনি, পৌর কাউন্সিলর আবু কাউসার, উপজেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এ ব্যাপারে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনতাকিম আশরাফ টিটুর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।