বাণিজ্য ডেস্ক:
সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বহুল আলোচিত পতেঙ্গা বে টার্মিনালের মাস্টার প্ল্যান অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়ে অংশীদার হতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। টার্মিনালের তিনটি অংশের মধ্যে দুটিতে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি এবং দুবাইয়ের ডি পি ওয়ার্ল্ড। পাশাপাশি বন্দরের মাল্টিপারপাস জেটিতে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে আবুধাবি পোর্ট।
সম্প্রতি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে চূড়ান্ত হওয়া প্ল্যানের ডিজাইনে পতেঙ্গা বে টার্মিনালের জন্য পৃথক তিনটি অংশ থাকবে। এর মধ্যে ১ হাজার ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্য করে দুটি জেটি থাকছে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডি পি ওয়ার্ল্ড এবং সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটির। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য থাকবে ১ হাজার ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের মাল্টিপারপাস জেটি। যেখানে অংশীদার আরব আমিরাতের আধুধাবি পোর্ট। এমনকি ওই বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দরের অংশ গড়ে তোলার জন্য ৫০ কোটি মার্কিন ডলার দিতে রাজি হয়েছে বিশ্বব্যাংক।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, আমরা বে টার্মিনাল ঘিরে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি। সেটির ডিজাইনও আমরা চূড়ান্ত করেছি এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই বেশ খুশি। যদি এ মাসের মধ্যে অনুমোদন পাওয়া যায়, তাহলে আমরা আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করতে পারব।
গত এক দশক ধরে এই বে টার্মিনাল নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আলোচনা চলছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় বারবার থমকে যায় বন্দর নির্মাণের কাজ। মূলত নৌপথের পাশাপাশি সড়ক এবং রেলপথের সুবিধা থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে সমুদ্র বাণিজ্যের জন্য বে টার্মিনাল প্রথম পছন্দ।
এক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে জোর দিয়ে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এনার্জি হাবের পাশাপাশি মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর দিয়ে যে সব পণ্য আসবে, তা বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে সরবরাহ করা যাবে। অর্থাৎ, কানেকটিভিটি বাড়বে। কাজেই দ্রুত সময়ে মধ্যে পণ্য সরবরাহের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৮ লেন করতে হবে।’
নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় প্রায় ৯০০ একর জায়গার ওপর প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই বে টার্মিনাল গড়ে তোলা হবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অংশ নিজেরাই বাস্তবায়ন করলেও চট্টগ্রাম বন্দরের অংশের জন্য আগামী মাসের মধ্যেই সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পাঠানো হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, আমাদের মাল্টিপারপাস টার্মিনালের জন্য একটি ডিপিপি তৈরি করবো। এই ডিপিপি সরকারি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।অনুমোদন পেলেই পরে টেন্ডার প্রসেসিংয়ে যাওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করলেও বে টার্মিনালের সক্ষমতা হবে ৫০ লাখের বেশি। পাশাপাশি যে কোনো বৃহৎ জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে। ২০২৬ সালের মধ্যে এই টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু করতে চান সংশ্লিষ্টরা।
ভূমি অধিগ্রহণসহ নানামুখী জটিলতায় প্রস্তাবিত বে টার্মিনালের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে। মাস্টারপ্ল্যানের অনুমোদনের পর দ্রুততম সময়ে এর বাস্তবায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার বিজনেস হাব হয়ে উঠবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।