হোম অন্যান্যসারাদেশ মনিরামপুরে চিকিৎসক যেখানে প্রয়োজন সেখানে নেই, স্থাপনাবিহীন স্থানে পদায়ন!

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি:

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ ও নেহালপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র দুটিতে বছরের পর বছর ধরে চিকিসৎক শূন্য রয়েছে। অথচ স্থাপনা (স্বাস্থ্যকেন্দ্র) না থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাতটি ইউনিয়নে সাতজন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে স্থাপনা না থাকার দোহায় দিয়ে এসব ইউনিয়নবাসীকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের পছন্দের সব হাসপাতালে। এর মধ্যে কুলটিয়া ইউনিয়নের সহকারী সার্জন ডা.সুমন কুমার নাগ কর্তৃপক্ষের বিনাঅনুমতিতে দুইবছর যাবত অবস্থান করছেন লন্ডনে। ফলে চিকিৎসকের অভাবে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ।

যশোরের সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা মনিরামপুরে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। আর এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও উপজেলার পশ্চিমাঞ্চল রাজগঞ্জ বাজার এবং পূর্বাঞ্চল নেহালপুর বাজারে দুইটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে পদ রয়েছে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো), একজন ফার্মাসিস্ট, একজন নার্স ও একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। কিন্তু স্বাস্থ্য কেন্দ্র দুটিতে বর্তমানে আছেন শুধুমাত্র একজন করে ফার্মাসিস্ট।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় সরেজমিনে নেহালপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট সমরেন্দ্র তরফদার। এ সময় কালিবাড়ি গ্রামের সুভাষ পাল (৭০) শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তার চিকিৎসার জন্যে দেয়া হয় প্যারাসিটাামল , স্যালবিউটামল ও এন্টিসিন্টামিন ট্যাবলেট। আবার নেহালপুর গ্রাম থেকে আসা আবুল কাশেম আলীকে সর্দিজ্বর, গৃহবধূ খাদিজা খাতুনকে রক্তশূন্যজনিত রোগের জন্যে কিছু ওষুধ দেয়া হয়। এ সময় দরজার বাইরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অন্তত ৭ জন রোগীকে।

ফার্মাসিস্ট সমরেন্দ্র তরফদার জানান, কয়েকবছর আগে একজন মেডিকেল অফিসার এখানে যোগদান করে কয়েকমাস পর বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। তারপর থেকে আর কাউকে পদায়ন (পোস্টিং) করা হয়নি। এছাড়া বর্তমানে এ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিনি ছাড়াও রয়েছেন মশিয়ার রহমান নামে একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। কিন্তু মশিয়ার রহমান প্রায় ১০ বছর ডেপুটেশনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছেন। ফলে এখন তিনিই (ফার্মাসিস্ট) চিকিৎসক, পিয়ন, ফার্মাসিস্ট, স্যাকমোর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

অন্যদিকে দুপুর ১২টার দিকে রাজগঞ্জে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। এ সময় মোবাইল ফোনে কথা হয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ফার্মাসিস্ট হিরা শীষের সাথে। তিনি জানান, আজ তিনি রাজগঞ্জে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন। বলেন, এ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তৌহিদ ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি বদলি হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যান। তারপর আর কাউকে পদায়ন করা হয়নি। এখন একমাত্র তিনিই এ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন। সময় পেলে মাঝে মধ্যে রোগী দেখেন তিনি।

অপরদিকে কোন প্রকার স্থাপনা না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে কাশিমনগর, ভোজগাতী, ঢাকুরিয়া, হরিদাসকাটি, শ্যামকুড়, কুলটিয়া ও মনোহরপুর ইউনিয়নে পদায়ন রয়েছে সাতজন চিকিৎসক (সার্জন)। তবে স্থাপনা না থাকার দোহাই দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা এসব ইউনিয়নে কোনদিন যাননি। তারা এখন প্রেষণে (ডেপুটেশনে) নিজের পছন্দের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে কুলটিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী সার্জন ডা. সুমন কুমার নাগ ২০২১ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থান করছেন। আবার কাশিমনগর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী সার্জন ডা. ফারজানা জাহান ডেপুটেশনে বর্তমান যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রয়েছেন। হরিদাসকাটির সহকারী সার্জন ডা. রাফেজা খাতুন, ঢাকুরিয়ার সহকারী সার্জন ডা. তাহমিনা ইসলাম, শ্যামকুড় ইউনিয়নের সহকারী সার্জন ডা. রঘুরাম চন্দ্রসহ অন্যরা একইভাবে ডেপুটেশনে রয়েছেন তাদের পছন্দের সব হাসপাতালে। ফলে চিকিৎসকের অভাবে এসব ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

শ্যামকুড় ইউনিয়নের লাউড়ী গ্রামের ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান জানান, সামান্য জ্বর হলেও অনেক দূর পাড়ি দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয় উপজেলা সদরে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, খাতা কলমে ইউনিয়নে চিকিৎসক পোস্টিং দেয়ার দরকার নেই।

ঝাপা ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টু জানান, রাজগঞ্জ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন চিকিৎসক পদায়নের জন্যে উপজেলা থেকে শুরু করে উপরিমহলে বার বার যোগাযোাগ করেও কোন লাভ হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. তন্ময় বিশ্বাস জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিকিৎসকদের ডেপুটেশন দিলে আমাদের কী করার আছে?

তবে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে বারবার চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে চিকিৎসকদের ডেপুটেশন বাতিল করে স্ব-স্ব স্থানে ফেরত পাঠাতে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন