হোম জাতীয় গিলমোরকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমে যাওয়া আরেকটি সংকট তৈরি করবে

জাতীয় ডেস্ক:

হঠাৎ করেই রোহিঙ্গাদের জনপ্রতি সহায়তা ১২ থেকে আট ডলারে নামিয়ে এনেছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। এতে তারা আরেকটি সংকটে পড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সচিবালয়ে নিজ দফতরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন মন্তব্য করেন তিনি।

বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা জানিয়েছি— হঠাৎ করেই রোহিঙ্গাদের জনপ্রতি যে ১২ ডলার সহায়তা দিত, তা আট ডলারে নামিয়ে নিয়ে এসেছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। এতে তারা আরেকটি সংকটে পড়ে যাবেন। আর সেখানে স্থানীয় নাগরিকদের চেয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা অনেক বেশি, স্থানীয়রা শ্রমবাজার হারাচ্ছে, আমাদের বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছেে—এসব অসুবিধার কথা জানিয়েছি গিলমোরকে।

‘এ জন্য তড়িত সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছি। তারাও স্বীকার করেছে—তড়িত সমাধান না হলে, স্বাধীনভাবে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে না পারলে তাহলে সংকট থেকে যাবে। আমরা মনে করি, সমস্যা সুরাহার জন্য দুই দেশেরই (বাংলাদেশ-মিয়ানমার) আন্তরিক হওয়া উচিত,’ বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে ইমন গিলমোর কী বলেছেন, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি বলেছেন—আমি ২০১৯ সালেও এসেছিলাম, তখন রোহিঙ্গা সংকট আমি দেখেছি। আমি মিয়ানমারেও গিয়েছিলাম। সেখানে তাদের যে অরাজকতা দেখেছি, তারা বলেছিল, তারা ফেরত নিয়ে যাবে। কিন্তু এখন মিয়ানমারে সাংঘাতিক একটা বৈরী পরিবেশ রয়েছে। যে কারণে হয়তো, তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করা যাবে না। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেষ্টা আছে, যাতে করে শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হয়।’

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের কাছে মানবতার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে, তার প্রশংসা করেছেন ইমন গিলমার। সবকিছুতে বাংলাদেশ সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের জানিয়েছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন সবকিছুতে উন্নত হয়েছে, অভূতপূর্ব সফলতা এনেছে, তার সঙ্গে মানবাধিকার নিয়ে অনেক কাজ করা হচ্ছে। এখানে মানবাধিকার কমিশন রয়েছে, তারা স্বাধীন। তারাও কাজ করছে, যা গিলমারকে জানিয়েছি।’

নির্বাচন নিয়ে তিনি কী জানতে চেয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা। তাদের জানিয়ে দিয়েছি, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। তবে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া। সেই উপহার দেয়ার জন্য তিন মাস নির্বাচন কমিশন সরকার পরিচালনা করবে। সরকার মানে, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচন পরিচালনা করতে যা যা প্রয়োজন, তা নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে করতে পারবে। আমরাও মনে করি, অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত একটি নির্বাচন আমরা উপহার দিতে পারবে নির্বাচন কমিশন।’

গুম, খুন ও বিরোধী দল যে হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগ করেছে, তা নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা; এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এগুলো নিয়ে বিশেষ কোনো কথা হয়নি। তারা বলেছে—তারা পর্যবেক্ষণ করেছে। গুম, খুন, ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনার অনেক কমে গেছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা গুম, খুনের একটি চিত্র তার সামনে তুলে ধরেছি। ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সালে যে সংখ্যক গুম হতো। ২০০৪ সালের একটি সংখ্যা তুলে ধরেছি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা অনুসারে, ২০০৪ সালে ৪০০ মানুষ নিখোঁজ হন। তখন যে সংখ্যক মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন তার তুলনায় এখন অনেক কম।

তিনি বলেন, ‘গুমের ইতিহাস আমরা যতটুকু জানি, যারা আত্মগোপন করে বিভিন্নভাবে, তাদের সম্পর্কে আমরা জানি। আবারও বলেছি, গুমগুলোর বেশিরভাগই হেইনাস (ঘৃণ্য) অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা দণ্ডের ভয়ে পালিয়ে বেড়ান। কিংবা পারিবারিক সমস্যার কারণে তারা পালিয়ে বেড়ান। কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য লোকসান দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’

‘৭৬ জন গুমের কথা, যেটা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থায়, সেগুলো সম্পর্কে তাকে একটা তথ্য দিয়েছি। যার মধ্যে ২৭ জনের অবস্থান জানিয়েছি। তারা গুম হয়নি, কেউ কারাগারে, কেউ পরিবারের সঙ্গে আছে। কেউ মালয়েশিয়া কিংবা ভারতে আছি। অন্য আরও কয়েকজনের খোঁজ নিচ্ছি, খুব শিগগিরই তাদের খোঁজ দিতে পারবো,’ যোগ করেন মন্ত্রী।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন