জাতীয় ডেস্ক:
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি ও সরবরাহের কাজ ছিল নির্বাচন কমিশনের। তবে এই দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগকে দিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩’- এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার (১২ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই আইনের আওতায় এখন আমাদের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন পরিচালিত হবে। তাদের এ সংক্রান্ত একটা অফিস থাকবে। অফিসে একজন নিবন্ধক থাকবে এবং নিবন্ধকের মাধ্যমে এই কাজটি করা হবে।
আইনটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- যেকোনো নাগরিক জন্মের পরপরই নাগরিক সনদ বা একটি নম্বর পাওয়ার অধিকারী হবেন। এটি অপরিবর্তিত হবে এবং জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নিতে পারবেন। তবে এটা পরিবর্তন করা যাবে না।
বর্তমানে যে সার্ভার আছে তা নির্বাচন কমিশনের অধীন, সেটি আলাদা করার প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় ডাটাবেজ স্থানান্তর কীভাবে হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই আইন অনুযায়ী এনআইডি সংক্রান্ত তথ্যাদি ওখান থেকে নিয়ে আমাদের যে নতুন নিবন্ধক থাকবেন, তার দফতরে স্থানান্তরিত হবে।
বর্তমানে যে নম্বরগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীন আছে সেগুলো চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
ভোগান্তি দূর করার জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে মো. মাহবুব হোসেন বলেন, এনআইডির ভুল থাকলে কীভাবে সংশোধন হবে, সেগুলো সহজ করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে জনবল লাগবে তারা তা নেবেন। সেভাবে অর্গানোগ্রাম তৈরি করবেন।
যাদের জন্ম নিবন্ধন বা এনআইডি হয়নি তারা এখন থেকে নতুন নম্বর নেবেন। সব জায়গায় এই নম্বরটি ব্যবহার হবে। যখন সে এই নম্বরটি পেয়ে যাবে, তখন আর অন্য কোনো নম্বর লাগবে না, বলেন তিনি।
সংসদে আইনটি পাস হলেই কার্যকর হবে কি না জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদে পাস হলেই এ আইন কার্যকর হবে না। আইনে একটি বিধান রাখা হয়েছে, সরকার নির্ধারিত তারিখ থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ আইনের গেজেট প্রকাশ হলেই হবে না, সরকার যেদিন থেকে কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করবে সেদিন থেকে কার্যকর হবে।
সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করে এটিএম শামছুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এরপর সেটির নাম দেয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র। এনআইডি সুরক্ষা সেবা হস্তান্তর নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশনের টানাপোড়েন প্রায় ১৪ বছরের।
গত বছরের শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নিজেদের কোনো মতামত না থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের বিষয়ে কর্মকর্তাদের আপত্তির বিষয়টি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছিলেন।
অন্যদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম শুধুমাত্র ভোটার বা ১৮ বছরের বেশি বয়সি নাগরিকের জন্য নয়, বরং সব নাগরিকের জন্য প্রাসঙ্গিক। এছাড়া ব্যাংক হিসাব খোলা, চাকরির আবেদন, ইউটিলিটি সংযোগ, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীন বিভিন্ন ভাতার আবেদন, খাস জমিপ্রাপ্তির আবেদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনআইডি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে ভোটার হওয়ার বিষয় মাত্র একটি। অন্যান্য ক্ষেত্রে এনআইডি ব্যবহারের বিষয়ে ইসির কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।’
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রমটি পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই নির্বাহী বিভাগের অধীনে হয়ে থাকে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেছিলেন, ‘বাস্তবতার নিরিখে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এটি নির্বাহী বিভাগের অধীনে হওয়া উচিত এবং এ কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’