সাধারণভাবে ‘হংকং ফ্লু’ নামে পরিচিত এইচ৩এন২ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে ভারতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের একজন দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানার এবং দ্বিতীয়জন দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যের কর্ণাটকের বাসিন্দা।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নতুন আসা এই ভাইরাসটির সংক্রমণে এই প্রথম মৃত্যু ঘটল ভারতে। শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ‘হংকং ফ্লুতে’ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১০০ জন।
ভারতের সর্বোচ্চ মেডিকেল গবেষণা সংস্থা অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের (এআইআইএমস) তথ্য অনুযায়ী, হংকং ফ্লু’র জন্য দায়ী এইচ৩এন২ এবং এইচ১এন১— দু’টি ভাইরাস। ভারতে শনাক্ত হওয়া রোগীদের নমুনায় দু ধরনের ভাইরাসেরই উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ৯০ জনের নমুনায় পাওয়া গেছে এইচ৩এন২ ভাইরাস এবং ৮ জনের নমুনায় মিলেছে এইচ১এন১ ভাইরাস।
যে দু’জনের মৃত্যুর সংবাদ শুক্রবার নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, তাদের মধ্যে কর্ণাটকে মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা গেছে। ওই ব্যক্তির নাম হাসান। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি এই রোগের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৬ দিন পর, ০১ মার্চ মারা যান। ৮২ বছর বয়স্ক হাসান হংকং ফ্লু’র উপসর্গ ছাড়াও ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের রোগী ছিলেন।
চলতি বছর শীতের শেষ দিকে ভারতে নতুন এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরু হয়। এই রোগের উপসর্গগুলোর সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও কোভিডের বেশ সাদৃশ্য আছে। উপসর্গগুলো হলো— কাশি, জ্বর, শ্বসকষ্ট, বুকে কফ জমে জাওয়া, বমি বমি ভাব, গলাব্যথা, শরীরব্যাথা এবং ডায়রিয়া।
এসব উপসর্গ প্রায় এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তারপর রোগী হয় সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন, নয়তো গুরুতর অসুস্থতার দিকে ধাবিত হতে থাকেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে এতদিন সর্দিজ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য দায়ী বলে শনাক্ত হওয়া ভাইরাসগুলোর তুলনায় অনেক শক্তিশালী এইচ৩এন২ এবং এইচ১এন১ নামের এই দু’টি ভাইরাস এবং এগুলোর সংক্রমণের ফলে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, সেগুলোও সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার চেয়ে অনেক ভোগান্তিকর হয়ে ওঠে রোগীদের জন্য। যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তারা এই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
প্রচলিত ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসগুলোর তুলনায় এইচ৩এন২ এবং এইচ১এন১ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাও অনেক বেশি। ভারতের চিকিৎসা গবেষণা সংক্রান্ত অপর প্রতিষ্ঠান দ্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যে দুটি স্বাস্থ্যবিধি— সাবান বা জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরিধান— সেগুলো এই রোগের বিস্তার ঠেকাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র : এনডিটিভি