রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর):
মনিরামপুরের ৪ ইউনিয়নের কয়েকশত নারী, পুরুষ ও কিশোরদের উপার্জনের মাধ্যম রেইনট্রি গাছের ভাইরাস। প্রতিদিন তারা কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পযর্ন্ত গাছ থেকে ভাইরাস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন।
শুক্রবার সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মনোহরপুর, নেহালপুর, দূর্বাডাঙ্গা ও কুলটিয়া ইউনিয়নের ওই কাজের সাথে জড়িতরা ভোরেই বেরিয়ে পড়েন সাদা বর্ণের ভিতর লালচে রঙের ভাইরাসযুক্ত ডালের সন্ধানে। যে গাছের ডাল সংক্রমিত বেশী সে ডাল তত বেশী দামে গাছের মালিকের কাছ থেকে ক্রয় করেন তারা। ক্রয়কৃত ভাইরাসযুক্ত গাছের ডাল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজি ৪ শ’ ৮০ টাকা থেকে ৫ শ’ টাকা কেজি বিক্রয় করছেন। এরপর পিকআপ অথবা করিমনে করে চলে যাচ্ছে পাইকারী আড়তে। ওই এলাকার বেকার যুবকরাও এ ব্যবসার সাথ সম্পৃক্ত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথমে সংক্রমিত গাছের ডাল দর কষাকষির মাধ্যমে গাছের মালিকের সাথে দাম ঠিক করে নেয়া হয়। পরে গাছ থেকে ডাল কেটে নারী শ্রমিকদের দিয়ে ভাইরাস ছাড়ানো হয়। ভাইরাস ছাড়ানোর পরে ওই ডাল বাড়ীতে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। বিক্রয়ের উপযোগী হলে বস্তায় করে স্থানীয় কুমারঘাটা, মনোহরপুর ও কেশবপুরের কলাগাছি বাজারে নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পযর্ন্ত বিক্রয় করা হয়।
এই ব্যবসার সাথে জড়িত হাসান, আহম্মদ, বাবুল ও রনিসহ অনেকেই জানান, মনোহরপুর, কুমারঘাটা, দাশেরহাট, কুলটিয়া, মশিয়াহাটী, নেহালপুরসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানের শিশু (রেইনট্রি) গাছ দেখে আসি। যেসব গাছে ভাইরাস হয়েছে সেগুলো তিন থেকে চার জন শ্রমিক নিয়ে গাছ থেকে সংক্রমিত ডাল কেটে ভ্যানে করে বাড়ীতে এনে ভাইরাস ছাড়িয়ে বিক্রয়ের জন্য বাজারে নিয়ে আসি। শুরুর দিকে এই ভাইরাস ৭ শত থেকে ১ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হলেও ক্রমশ যোগান বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে।
পাইকারী ব্যবসায়ী মুসা, সুমন, সবুজসহ আরো অনেকেই জানান, সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে ক্রয় করে আমরা পাইকারী অন্য জায়গায় বিক্রয় করি। এগুলো সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে সাড়ে ৫শ’ টাকা দরে বিক্রয় করি। মনোহরপুর বাজারের সদ্য এই ব্যবসায়ের জড়িত মোঃ সুমন জানান, আমার মুলত ধানের আড়তের ব্যবসা। তার ভিতরে ভাইরাসের ব্যবসাটা করছি, ভাল লাভও পাচ্ছি।
এই ভাইরাস কি কাজে ব্যবহার হয় এমন প্রশ্নের জবাবে আড়ত ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরাও সঠিক জানি না। তবে লোকমুখে শুনেছি এটা দিয়ে আসবাবপত্রে রং করার কাজে উন্নতমানের আঠা বা গালা তৈরী করা হয়ে থাকে।