হোম অন্যান্যশিক্ষা রাবিতে ছাদ ধস: আবারও আলোচনায় বালিশকাণ্ডের সেই ঠিকাদার

রাবিতে ছাদ ধস: আবারও আলোচনায় বালিশকাণ্ডের সেই ঠিকাদার

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 56 ভিউজ

শিক্ষা ডেস্ক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন আবাসিক হলের ছাদ ধসে পড়ার ঘটনায় আবারো আলোচনায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশকাণ্ডে আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের নাম। ধসে যাওয়া ভবনটির নির্মাণের দায়িত্বে ছিল এ প্রতিষ্ঠানটি। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, ত্রুটি ও গাফিলতিতেই ছাদ ধসের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ধসে যাওয়া ভবন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কলাম ছাড়াই ৩০ ফুট উঁচুতে নির্মাণ করা হয় ৫৬ ফিট লম্বা দুটি বিম। সেটি জমে শক্ত ও পাকাপোক্ত হতে সময় দিতে হয় কমপক্ষে এক সপ্তাহ। কিন্তু পরদিনই দেয়া হয় ছাদ ঢালাই। ফলাফল যা হবার তাই। নিমিষেই ধসে পড়লো ছাদ। চাপা পড়ে আহত হলেন ৯ শ্রমিক।

রাবি’র নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে পড়ার ঘটনায় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও খামখেয়ালিপনার অভিযোগ উঠেছে। কাজের মান নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বিষয়টি অনুসন্ধানে নামে সময় সংবাদ। এরপরই বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল। জানা যায়, এই ভবনটির নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে গেলে সময় সংবাদের রিপোর্টার ও ক্যামেরা দেখে পালিয়ে যান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তারা।

৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছাদ ধসে পড়া ভবনটি নির্মাণ করছে মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি একই প্রকল্পে ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ তলা আরেকটি একাডেমি ভবন নির্মাণ করছে। নির্মাণ কাজ দেখভালের দ্বায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীদের অভিযোগ, কমপক্ষে ৭ দিনের আগে শহীদ এএইচ এম কামারুজ্জামান আবাসিক হলের অডিটোরিয়ামের ছাদ ঢালাই দিতে বারবার নিষেধ করার পরেও কোনো তোয়াক্কা করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির লোকজন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ৩০ ফুট উঁচুতে অর্থাৎ ২ তলার সমান উচ্চতায় কোনো কলাম ছাড়াই ঢালাই করার জন্য ৫৬ ফুট বিম নির্মাণ করার কথা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আমরা বলেছিলাম বিম নির্মাণের পর অন্তত সপ্তাহখানেক সময় দেয়ার জন্য। যাতে সেটা শক্তপোক্ত হয়। কিন্তু তারা সেটি করেনি।

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ইউসুফ আলী বলেন, আমাদেরকে বলা হয়েছিল তারা বিম ঢালাই করবে। কিন্তু তারা তা না করে, বিম ও ছাদ ঢালাই দিয়েছে, যা আমরা জানতাম না। তারা যা করেছে সেটা অনিয়ম।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, দুটি আবাসিক হল, একটি শিক্ষক কোয়ার্টার, স্কুল, ড্রেনসহ ১৩টি স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।

শিক্ষকদের অভিযোগ, ঢিমেতালে নির্মাণ চলায় প্রকল্পের মাত্র ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। জবাবদিহিতা, সুষ্ঠু তদারকির অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প শেষ হয়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার শাহরিয়ার বলেন, আমরা আশা করেছিলাম মার্চের মধ্যে এএইচএম কামারুজ্জামান আবাসিক হল নির্মাণ সম্পন্ন হবে। কিন্তু ছাদ ধসে যাওয়ায় সেটি হচ্ছে না। বাকি ৩টি ভবন সম্পন্ন হতেও সময় লাগবে। আমরা চেষ্টা করছি নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে।

এদিকে, আবাসিক হলের ছাদ ধসে পড়ার ঘটনায় প্রকৌশল অধিদফতর, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মঙ্গলবার রাতে সভা করেন। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে ৩ সদস্যের কমিটি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫১১ কোটি টাকা। নির্ধারিত মেয়াদ শেষে বাড়তি সময়েও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের বালিশকাণ্ডে বেশ আলোচিত ছিল তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদেরই একটি ‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। বালিশকাণ্ডে ঘটনার পর এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে পড়ার ঘটনায় আবারও আলোচনায় এই প্রতিষ্ঠানটি। এরইমধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), সিটি করপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের চারটি ভবনে আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান- সাজিন এন্টারপ্রাইজ, মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও জিকেপিবিএল-পায়েল-এইচএল কনসোর্টিয়াম। মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশনের সরবরাহ করা মালামাল ‘স্পেসিফিকেশন’ অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়নি বলে তথ্য উঠে এসেছিল।

তাদের সরবরাহ করা মালামালের মধ্যে একটি বালিশ কিনতে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা দেখানো হয়। বাংলাদেশে একটি বালিশের বাজার মূল্য ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি বালিশের মূল্য ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা দেখানো হয়েছে, যা ছিল বাজার মূল্যের প্রায় ২০ গুণ বেশি। আবাসন প্রকল্পের অধীনে নির্মিত ফ্ল্যাটে সেই বালিশ তোলার খরচ হিসেবে দেখানো হয় ৯৩১ টাকা ।

এছাড়া একটি চুলা ক্রয়ে ৭ হাজার ৭৪৭ টাকা এবং তা ফ্লাটে তুলতে ৬ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। একটি ইস্ত্রি কিনতে ৪ হাজার ১৫৪ টাকা এবং তা ফ্লাটে তুলতে ২ হাজার ৯৪৫ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। এভাবে রূপপুর প্রকল্পে কেনাকাটায় পুকুর চুরির সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে দুদক তদন্ত শুরু করে। এসব ঘটনায় ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে দুদক।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন