হোম অন্যান্যসারাদেশ মোতালেব মৃধার একটাই দাবি একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক

মোতালেব মৃধার একটাই দাবি একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক

কর্তৃক
০ মন্তব্য 140 ভিউজ

আল মামুন, গলাচিপা(পটুয়াখালী) :
আমার বুকের ধন নিরাপরাধ ছেলে মামুনসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাকর্মীদের যারা প্রকাশ্যে জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করছে, অবিলম্বে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হােক, এটা আমার একমাত্র দাবি। এর বেশি কিছু আর চাই না। ষােল বছর ধরে অপেক্ষা করেছি বিচার পাওয়ার আশায়। বুকের মধ্যে পাথর বয়ে বেড়াচ্ছি।

আদালতের বিচার ও রায় হয়েছে। এখন সেই রায় কার্যকর চাই। নিজ চােখ হত্যাকারীদর ফঁাসি দেখতে চাই। এর মধ্যে দিয়ে মামুনের আত্মার শান্তি পাবে। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহত মামুন মৃধার কবরের পাশ দঁাড়িয় বৃদ্ধ বাবা মােতালেব মৃধা শুক্রবার বৃষ্টিভেজা সকালে দৃঢ় কণ্ঠ এ দাবি জানান।

তিনি আরও বলেন, একমাত্র ছেলেকে হারানাের পর প্রধানম্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন এবং দিয়েছেন। প্রধানম্ত্রীর কাছে আমাদের আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার নাই। তাঁর ঋণ শােধ করা যাবে না। এখন কেবলমাত্র ছেলের হত্যাকারীদর বিচারের রায় কার্যকর চাই।

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম আলীপুরা গ্রামের মােতালেব মৃধার ছেলে মামুন মৃধা ঢাকার কবি নজরুল সরকারী কলেজে অনার্সের ছাত্র ছিলেন। তার বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। ছাত্রলীগ কর্মী মামুন মৃধা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য সামনে থেকে শুনতে ওইদিন জনসভায় গিয়েছিলেন। গ্রেনেড হামলায় অন্যদের সঙ্গে তিনিও নিহত হন।

হত্যা বার্ষিকীর দিন নিহত মামুন মৃধার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসা আওয়ামী লীগ কেদ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিম্ত্রী আখম জাহাঙ্গীর হােসাইনকে কাছে পেয়ে নিহত মামুনর বাবা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাকে জড়িয়ে ধরে কানায় ভেঙ্গে পড়েন। আখম জাহাঙ্গীর হােসাইন কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি আমার এ দাবি জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌছে দিবেন। হত্যাকারীদের ফাঁসি হলেই কবরে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।

ওই সময় আখম জাহাঙ্গীর হােসাইন মােতালেব মৃধাকে আশ্বাস্ত করে বলেন,‘ জননত্রী নিরালসভাবে অনেক কিছু করার চেষ্টা করছেন। আশা করা যায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ হত্যাকান্ডের রায় কার্যকর হবে। জননেত্রী আগেও যেমন আপনাদের পাশে ছিলেন, আগামিতেও তিনি আপনাদের পাশে থাকবেন।’

গলাচিপা ও দশমিনা এলাকার দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আখম জাহাঙ্গীর হােসাইন গ্রেনেড হামলায় নিহত মামুন মৃধার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় দােয়া মােনাজাত করা হয়। আখম জাহাঙ্গীর হােসাইন পর মামুন মৃধার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন।

এ উপলক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও শহীদ মামুন মৃধা স্মৃতি সংসদ কবরের পাশে রাস্তার ওপর শােকসভা ও মিলাদের আয়ােজন করেন। আলী হােসেন মৃধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শােকসভায় আখম জাহাঙ্গীর হােসাইন ছাড়াও গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক সন্তোন দে, দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ লিটনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা রাখেন এছাড়াও উপস্তিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মা. জাহাঙ্গীর শিকদার, গলাচিপা উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সর্দার মু. শাহ আলম, সহ সভাপতি গােলাম গাউস তালুকদার, দুলাল চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান বাবলু ভূঁইয়া, দশমিনা উপজেলার সহ সভাপতি কাজী আবুল কালাম, এ্যাড. আব্দুল খালেক, যুবলীগের সভাপতি সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাবৃন্দ।

শােক সভায় মামুন মৃধার লাশ উদ্ধারের বর্ণনা দিয়ে আখম জাহাঙ্গীর হােসাইন বলেন, ‘ওইদিন হাসপাতাল লাশের স্থুপ জমেছিল। অনেক লাশ শনাক্ত করা যাচ্ছিলো না। মামুন মৃধার পকেটে একটি নাম ঠিকানা লেখা চিরকুট পাওয়া যায়। যা দিয়ে তাকে শনাক্ত করা হয়। পরেরদিন অনেক কষ্টে তার লাশ গ্রামরর বাড়িতে পৌছে দেয়া হয়। ওইদিনের নির্মম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মােতালেব মৃধা জানান, ‘একমাত্র ছেলে মামুন নিয়ে তিনি ঢাকায় একই মেসে থাকতেন। একটি স্বমিলে তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন। মামুন মনে প্রাণে শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগকে ভালবাসতেন। সবসময় পত্রপত্রিকা পড়তেন। ঢাকার যেখানেই শেখ হাসিনার জনসভা কিংবা সমাবেশ হতাে, সেখানেই মামুন প্রাণের টানে ছুটে যেতেন। ওইদিন দুপুরে বাবা-ছেলে একত্রে ভাত খেয়েছেন।

সেটাই ছিল শেষ দেখা। আমি কাজে চলে যাই আর মামুন ছুটে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর শেখ হাসিনার সমাবেশে। সন্ধ্যায় তিনি লােকমুখে শুনে ছুটে যাই ঘটনাস্থানে কিন্তুু পুলিশের টিয়ারসেল আর লাঠিচার্জ ঘটনাস্ল যেতে পারিনি। আখম জাহাঙ্গীর হােসাইনের চেষ্টায় পরের দিন তিনি ছেলের লাশ নিয়ে বাড়ি আসেন। তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে যেমন তাদের পাশ ছিলেন। নিয়মিত খঁাজ খবর নিতেন। এখনও খোঁজ খবর নেন। এলাকার সাবেক এমপি ও মম্ত্রী আখম জাহাঙ্গীর হােসাইনও নিয়মিত খোঁজ খবর নেন। প্রধানম্ত্রীর কাছে বেশি কিছু চাওয়ার নেই। চার মেয়ের মধ্যে ছােট দুই মেয়ে রুনা এইচএসসি ও রুবিনা বিএ পাস করেছে। মেয়ে দুটির চাকরি হল সংসারর অভাব ঘুচে যেত।
Attachments area

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন