মণিরামপুর (যশোর)প্রতিনিধি :
মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সুফিয়া বেগম (৬০) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অপর দিকে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরসহ ভূক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ সরকারি হাসপাতালে কিছু রোগী ভর্তি করা হলেও সঠিকভাবে সু-চিকিৎসা প্রদান করা হয়না। এছাড়া হাসপাতালে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করলেও করোনার ভয়ে অধিকাংশ ডাক্তাররা রোগীর সীমানায় আসেননা বলে অভিযোগ রয়েছে। জানাযায়, উপজেলার চাঁন্দুয়া গ্রামের আব্দুর রশীদ ওরফে খোকন মোড়লের স্ত্রী সুফিয়া বেগম পৌর এলাকার মোহনপুর গ্রামে মেয়ে আনোয়ারার বাড়িতে যাওয়ার জন্য শনিবার সকাল ১০টার দিকে বাড়ি থেকে রওনা হন।
পথিমধ্যে অজ্ঞাত স্থানে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে এক পথচারী তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবশ্য ওই পথচারী মুহুর্তের মধ্যে হাসপাতাল এলাকা ত্যাগ করেন। এরপর মাথায় আঘাতসহ রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞাত রোগী হিসেবে তাকে জরুরী বিভাগ থেকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় মহিলা ওয়ার্ডে নিয়ে ফেলে রাখা হয়। ততক্ষণে চিকিৎসার অবহেলায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন ওই বৃদ্ধা। এক পর্যায় তাকে যশোরে রেফার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তার কোন স্বজনকে না পেয়ে জরুরী বিভাগের ডাক্তার ও নার্সরা চুপচাপ বসে থাকেন। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের পাশ্ববর্তী মোহনপুর গ্রাম থেকে ওই বৃদ্ধার মেয়ে আনোয়ারা অন্য রোগী দেখতে হাসপাতালে আসেন।
এ সময় তিনি জানতে পারেন মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়া অবস্থায় তার মাকে যশোরে নিতে হবে। তবে, রোগী বহনকারী সরকারি এ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের কোন স্থানে পড়ে থাকলেও চালককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর স্থানীয়দের সহযোগীতায় একটি প্রাইভেটকার যোগে ওই বৃদ্ধাকে যশোরে নেয়ার পথে মনিরামপুর পৌর শহরে তার মৃত্যু ঘটে। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর বাবুল আক্তার বাবুল সাংবাদিকদের জানান, তিনিও খবর নিয়ে জানতে পারেন ডাক্তারদের অবহেলায় ওই বৃদ্ধার মৃত্যু ঘটেছে। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, জখম হওয়া কোন রোগীকে যদি ২ থেকে ৩টি সেলাই দিতে হয় সেখানেও হাসপাতালের বর্তমান ডাক্তারদের অনিহা রয়েছে।
সে কারনে ছোট খাট রোগীদেরকেও মনিরামপুর থেকে অন্যস্থানে রেফার করা হয়ে থাকে। এমনকি কিছু কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও করোনার কারনে অধিকাংশ ডাক্তাররা রোগীর ত্রি-সীমানায় আসেন না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সুমন কুমার নাগ এ প্রতিনিধিকে বলেন, পরিচয় বিহীন বৃদ্ধাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিলো। তার শারীরিক অবস্থার অবন্নতি দেখে তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরবর্তীতে তার কী হয়েছে তা আমি জানিনা।কিন্তু খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে ওই বৃদ্ধা মনিরামপুর হাসপাতালেই মারা গেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, তিনি ঘটনার সময় হাসপাতালে না থাকলেও খবর নিয়ে জেনেছেন, ওই বৃদ্ধা রোগীর কন্ডিশন অনেক খারাপ ছিল। ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তবে, ওই বৃদ্ধা বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।