দুর্দান্ত বোলিংয়ে কাজটা সহজ করে দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ-তাসকিন আহমেদরা। ইংল্যান্ডকে আটকে দিয়েছিলেন অল্পতেই। ব্যাট হাতে বাকি সমীকরণ মিলিয়েছেন শান্ত-তৌহিদরা। দুই বিভাগে দাপটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের উড়িয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। টানা দুই জয়ে প্রথমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
ম্যাচ জয়ের মূল নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। একাদশে জায়গা পেয়ে মাত্র ১২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতেও রেখেছেন অবদান। তাই ম্যাচ সেরার পুরস্কারও উঠেছে মিরাজের হাতে। সিরিজ জয়ের পর এবার বাংলাদেশের সামনে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ। সেই লক্ষ্যে আগামী ১৪ মার্চ অতিথিদের মুখোমুখি হবে লাল-সবুজের দল।
আজ রোববার (১২ মার্চ) বাংলাদেশের বিপক্ষে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১০ উইকেটে ১১৭ রান করেছে ইংল্যান্ড। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৮ রান করেছেন বেন ডাকেট।
জবাব দিতে নেমে ৭ বল হাতে রেখে জয়ের নাগাল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি স্বাগতিকদের। তৃতীয় ওভারেই স্যাম কারানের বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ, ৯ রানে থামেন ডানহাতি ওপেনার।
লিটনের পর থিতু হতে পারেননি রনি তালুকদারও। ৯ রানে তাঁকে বিদায় করেন আর্চার। মাঝে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ফেরেন তৌহিদ। ১৮ বলে তিনি করেন ১৭ রান।
তবে বাকিরা বিদায় নিলেও উইকেটে টিকে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। বাকিদের নিয়ে দলকে জয়ের দুয়ারে পৌঁছে দেন শান্ত। ৪৭ বলে ৪৬ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দেন শান্ত। মিরাজ করেন ২০ রান।
এর আগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটিতে টসে জিতে বোলিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দেখেশুনে করে ইংল্যান্ড। কিন্তু তাসকিন আহমেদ এসে ভাঙেন সেই ছন্দ। বাংলাদেশি পেসারের বল মোকাবিলায় থার্ডম্যানে ক্যাচ তুলে দেন ওপেন করতে নামা ডেভিড মালান। সেখানে থাকা হাসান মাহমুদ ক্যাচ নিয়ে ৫ রানে মালানকে মাঠ ছাড়া করেন। ১৬ রানে ভাঙে ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটি।
পাওয়ার প্লের পরের ওভারে এসেই ইংলিশদের দ্বিতীয় জুটি ভাঙেন সাকিব। ফিরিয়ে দেন আরেক ওপেনার ফিল সল্টকে। ১৯ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ২৫ রান করে ফেরেন সল্ট।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারকে থিতু হতে দিলেন না হাসান মাহমুদ। তরুণ পেসারের ইয়র্কারে এলোমেলো হয়ে যায় বাটলারের স্টাম্প। অধিনায়ককে হারানোর মাঝেই মেহেদী হাসান মিরাজ দেন আরও বড় ধাক্কা। তিনি মাঠছাড়া করেন ছন্দে থাকা মঈন আলিকে। মিরাজকে সুইপ করে ছক্কা মারার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন মঈন। ফেরার আগে করেন ১৭ বলে ১৫ রান।
দলীয় ৫৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চরম চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। এই সুযোগে অতিথিদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। একদশে ফেরা মিরাজ একাই তুলে নেন ৪ উইকেট। সাথে বাকিরাও যোগ দেন উইকেট উৎসবে। একের পর এক উইকেট হারিয়ে বড় পুঁজির দেখা পায়নি ইংল্যান্ড। নির্ধারিত ওভারে কোনো মতে একশ ছাড়িয়ে থামে সফরকারীদের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে দারুণ করেন মিরাজ। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে তিনি তুলে নেন ৪ উইকেট। সমান একটি করে নেন তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড দল : ২০ ওভারে ১১৭/১০ ( সল্ট ২৫, মালান ৫, মঈন ১৫, বাটলার ৪, কারান ১২, ওকস ০, জর্ডান ৩, ডাকেট ২৮, রেহান ১১, আদিল ১*, আর্চার ০* ; তাসকিন ৪-০-২৭-১, মোস্তাফিজ ৪-০-১৯-১, নাসুম ১-০-১৩-০, সাকিব ৩-০-১৩-১, হাসান ২-০-১০-১, মিরাজ ৪-০-১২-৪, শান্ত ১-০-৯-০, আফিফ ১-০-৭-০)।
বাংলাদেশ : ১৮.৫ ওভারে ১২০ (লিটন ৯, রনি ৯, তৌহিদ ১৭, শান্ত ৪৬, মিরাজ ২০, সাকিব ০, তাসকিন ৮, আফিফ ২ ; আর্চার ৪-০-১৩-৩ , মঈন ৪-০-২৫-১, রশিদ ৪-০-২৮-০, কারান ৩-০-১৫-১, ওকস ১-০-৭-০, রেহান ২-০-১১-১)।
ফল : ৪ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মেহেদী হাসান মিরাজ।
সিরিজ : ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।