খেলার সংলাপ:
স্বপ্ন, একাগ্রতা, পরিশ্রম—শব্দগুলোকে কীভাবে নিজের ভেতর চাষ করতে হয় তার উদাহরণ তরুণ ভারতীয় ক্রিকেটার যশস্বী জাইসওয়াল। আইপিএলের হাজারতম ম্যাচে গতকাল রোববার (৩০ এপ্রিল) রাজস্থান রয়্যালসের পক্ষে মাঠে নামেন তিনি। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে উপহার দেন ৬২ বলে ১২৪ রানের চমৎকার ইনিংস। তাতেই শুরু হয় হইচই।
শতক তো অনেকেই হাঁকান। তার শতরানের মাহাত্ম্য অন্য জায়গায়। ‘আনক্যাপড’ খেলোয়াড় হিসেবে একম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান এখন জাইসওয়ালের। সেটিও এই হইচইয়ের কারণ নয়, জাইসওয়ালের উঠে আসার গল্পটাই হয়ে উঠছে মুখ্য। বছর কয়েক আগেও যিনি অনুশীলনের টাকা যোগাতে ফুচকা বিক্রি করতেন, তিনি এখন সবার আলোচনায়।
জাইসওয়ালের জন্ম ভারতের উত্তর প্রদেশের সুরিয়া গ্রামে। রং বিক্রেতা বাবা ও স্কুল শিক্ষিকা মায়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানকে ক্রিকেটার বানানো। কিন্তু, জাইসওয়াল নাছোড়বান্দা। চলে আসেন মুম্বাই। বয়স তখন সবে দশ, যে বয়সে বিবেকের থেকে আবেগ বেশি কাজ করে। নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে সেই বয়সটাতে বিসর্জন দেন উচ্ছ্বল তারুণ্যকে।
কাজ আর অনুশীলনের সমন্বয় করা হয়ে উঠছিল না। সারাদিন অনুশীলনে এতটাই বুঁদ হয়ে থাকতেন, কাজ করার সময় পেতেন না। ফলে, চলে যায় কাজটি। এতে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়ে। হাল না ছেড়ে মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে ফুসচা বেচতে শুরু করেন জাইসওয়াল। খেলার প্রতি তার আগ্রহ দেখে কাছে টেনে নেন আজাদ ময়দানের এক মাঠকর্মী। জ্বালা সিংয়ের বাড়িতে আশ্রয় পাওয়ার পর নতুন করে খেলা শুরু করেন তিনি। এরপর আর পিছু ফিরতে হয়নি।
২০১৮-১৯ সালে রঞ্জি ট্রফিতে সুযোগ পেয়ে মাত্র ১৫ ম্যাচে ৮০.২১ রানের গড় তুলেছেন ব্যাটে। মোট ১,৮৪৫ রান করে চিনিয়েছেন নিজেকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইতোমধ্যে করেছেন ৯টি শতক। সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ডোমেস্টিকে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে গড়েছেন দ্বিশতকের রেকর্ড।
একটু খেলতে চেয়েছিলেন। কারণ, জীবনে কেবল পারার মতো ক্রিকেটটাই পারেন। সেটিও দারুণভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। তাকে দুই কোটি ৪০ লাখ রুপিতে দলে ভিরিয়ে রাজস্থানও আছে স্বস্তিতে। তার এমন পারপরম্যান্সে তাকে আগামীর বড় তারকা হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের বহুজন।