হোম এক্সক্লুসিভ ফিরে দেখা ২০২১ : আদালত অঙ্গনে যত ঘটনাবহুল রায়

অনলাইন ডেস্ক :

দেশে নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও গত বছর থেমে থাকেনি বিচারিক কার্যক্রম। বরং নিষ্পত্তি হয়েছে চাঞ্চল্যকর আবরার হত্যা মামলার রায়। দেশ–বিদেশে আলোচনার জন্ম দেওয়া এ রায় দ্রুত বিচার আইনে নিষ্পত্তি করে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। একইভাবে দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার দণ্ড, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের দুর্নীতি মামলার রায়সহ বহুলআলোচিত রায় ছিল ২০২১ সাল।

আবরার হত্যার রায়

২০২১ সালে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বীকে (২২) নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায়। আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ৭ অক্টোবর ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

গত ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের উপস্থিতিতে আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এ মামলায় ছাত্রলীগের ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

এস কে সিনহার কারাদণ্ড

বছরে আরেকটি আলোচিত ছিল সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড। দেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতির ফৌজদারি অপরাধে কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা দেশের গণমাধ্যমসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছিল। গত ৮ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় চার বছর এবং মানি লন্ডারিংয়ের আরেক ধারায় সাত বছরসহ মোট ১১ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। সেইসঙ্গে ৪৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং তা দিতে ব্যর্থ হলে অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারিক আদালত।

২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর এস কে সিনহা শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে চলে যান। এরপর আর তিনি দেশে ফেরেননি। ২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

জুলহাস-তনয়

রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান এবং তাঁর বন্ধু মাহবুব তনয়কে হত্যার দায়ে ছয় জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এটিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। গত ৩১ আগস্ট ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় দেন।

২০১৯ সালের ১২ মে জিয়াসহ আট জনের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় এ মামলাটি করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মুহম্মদ মনিরুল ইসলাম। জুলহাজের সঙ্গে নিহত মাহাবুব তনয় নাট্য সংগঠন লোক নাট্যদলের শিশুসংগঠন পিপলস থিয়েটারে জড়িত ছিলেন।

অভিজিত হত্যা

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক এবং মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কে হত্যার ঘটনার মামলাও আলোচিত ছিল। এ মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) পাঁচ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় অভিজিতের স্ত্রী বন্যাও গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলা করেন।

লুৎফুজ্জামান বাবরের রায়

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গত ১২ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এর বিচারক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে সাত কোটি পাঁচ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৬ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি দুদক বাবরের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করেন। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক রুপক কুমার সাহা তদন্ত শেষ করে ওই বছরের ১৬ জুলাই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বাবরের বিরুদ্ধে সাত কোটি পাঁচ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৬ টাকার অবৈধ সম্পদ রাখার অভিযোগ করা হয়।

দীপন হত্যা

প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যার দায়ে আট আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

২০১৫ সালের ৩১ নভেম্বর আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ কার্যালয়ে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফজলুর রহমান আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর পরে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে বদলির নির্দেশদেন বিচারক। পরের বছর ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।

রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের রায়

রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। গত ১১ নভেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার এ রায় ঘোষণা করেন।

রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ২০১৭ সালের ৬ মে বনানী থানায় মামলা করেন এক ছাত্রী।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তাঁর বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাদী ও তাঁর বান্ধবীকে জোর করে ঘরে নিয়ে যান আসামিরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন